সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় একই জমি দুই পক্ষের নামে নামজারীর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা হামলার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে উপজেলার বালিজুড়ী বাজার এলাকায় ভুক্তভোগীদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ভুক্তভোগী সুমন আহাম্মেদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বালিজুড়ী এলাকার ৩৮ শতাংশ জমিতে ১৯৬০ সাল থেকে তার পূর্বপুরুষরা বসবাস করে আসছেন। পরবর্তী ১৯৮৬ সালে মো. ইস্রাফিল শেখের নামে সরকারিভাবে ভূমিহীন হিসেবে রেজিস্ট্রি কবুলিয়ত সম্পন্ন হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রতিপক্ষ একটি চক্র সেই জমি নিজেদের দাবি করে মামলা দায়ের করে। মামলায় ইস্রাফিল শেখের ওয়ারিশদের পক্ষে রায় দেন নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টও।
সুমন আহাম্মেদ বলেন, ‘তবে সেই রায় অমান্য করে গত ১৮-২০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিপক্ষ চারজনের নামে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ জমি নামজারী করা হয়। ফলে একই জমি দুই পক্ষের নামে নামজারী সম্পন্ন হয়। ওই সময় মাদারগঞ্জে বালিজুড়ী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সাদেকুর রহমান, সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন মো. আবু কালাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে দায়িত্বে ছিলেন সায়েদা খানম লিজা। বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রার ব্যতীত অন্যরা বদলি হয়েছেন।’
সুমন আহাম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই জমির ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেও প্রতিপক্ষ চক্রটি সেই টাকার আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে। এ বিষয়ে আমরা গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এর প্রতিবাদ করায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।’
এ ঘটনায় মাদারগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. আবু কালামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, ‘আমরা একটি জিডি পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদারগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল দিও বলেন, ‘নায়েব সরেজমিন তদন্তের পর প্রতিবেদন দিলে নামজারী করা হয়। তবে অনলাইনের মাধ্যমে বন্ধের দিনও নামজারী সম্পন্ন করা সম্ভব। আদালতের রায় থাকার পরও কীভাবে নামজারী হয়েছে, তা আমার জানা নেই—কারণ তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এখন ভুক্তভোগীরা আমাকে জানালে আমি বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবার যদি আমার কাছে আসে, আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
কেকে/ এমএ