সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
দেশজুড়ে
বাঞ্ছারামপুরে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি
বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রোববার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৪:৫৭ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে অবৈধভাবে সিসা তৈরির ফলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। এতে করে শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে নদী, কৃষিজমি ও পরিবেশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে এলাকার তিন ফসলি জমি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ২নং পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডোমরাকান্দি (নবীপুর) গ্রামে নদীর ধারে প্রতিদিন রাত ৯/১০টার পর ট্রাকভর্তি পুরোনো ব্যাটারি এনে আগুনে পোড়ানো হয়। এই কাজ চলছে গত ৫-৬ মাস ধরে। তবে এসব ব্যাটারি কোথা থেকে আসে, তা এখনো জানা যায়নি।

অবৈধভাবে সিসা তৈরি, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে খোলা জায়গায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করছেন স্থানীয় আমিরুল ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন অংশীদার রয়েছেন বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে আছেন ওবায়দুল্লাহ ও জাহাঙ্গীর নামের দুই ব্যক্তি। স্থানীয়রা জানান, তারা এতটাই প্রভাবশালী যে এলাকাবাসী কিংবা সাংবাদিকরাও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমরান হোসেন কামাল বলেন, আমরা আর চুপ থাকবো না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গ্রামের মানুষ, ফসলী জমি, স্বাস্থ্য সব হুমকির মুখে। আমরা প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের জানিয়েছি।

রাতের আঁধারে চলছে ব্যাটারি পোড়ানো, উল্টো হুমকি প্রতিবাদকারীদের

রাতের আঁধারে শ্রমিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই মুখে মাস্ক বা হাতে গ্লাভস না পরেই খোলা জায়গায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করছেন। এতে করে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, আজ রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি প্রদান করে সীসালোভী পক্ষ।

সিসা গলে তৈরি হয় ৩০ কেজির বাট, বিক্রি হয় চড়া দামে

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যাটারি পুড়িয়ে বের করা সিসা লোহার কড়াইয়ে ঢেলে ৩০ থেকে ৩২ কেজি ওজনের বাটে রূপান্তর করা হয়। পরে সেই সিসার বাট বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, আমার বাড়ির পাশে এই কারখানার কারণে আমিসহ আমার বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। 

এক পথচারী আলামিন মিয়া জানান, পুরোনো ব্যাটারির সিসা গলানোর কারণে এলাকার অনেক মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইসহ শ্বাসকষ্টের রোগে ভুগছে। এসিডযুক্ত ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় জমির ফসলের ক্ষতির কারণ।

স্বীকার করলেন মালিক, নেই পরিবেশ ছাড়পত্র

ব্যাটারি কারখানার মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যাটারি কারখানা থেকে নষ্ট ব্যাটারী এনে সেগুলো থেকে সিসা বের করে আগুনে গালিয়ে বাটা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। আমরা কারও কোনো ক্ষতি করি না। তবে যেহেতু এলাকাবাসী চায় না, আমরা শীঘ্রই এটি বন্ধ করে দিবো।

তার অংশীদার ওবায়দুল্লাহ জানান, আমাদের ট্রেডলাইসেন্স আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই।

কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সিসা এমনই এক খারাপ পদার্থ। এইটা যেখানে পড়বে, সেখানে কোনো ধরনের ফসল হবে না, হলেও সেটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএসআই ডা. রঞ্জন বর্মন বলেন, ব্যাটারী আগুনে পুড়লে ব্যাটারিতে থাকা সীসা, অ্যাসিড, পারদ, নিকেল ও ক্যাডমিয়াম পুড়ে বিষাক্ত কালো ধোয়া আর অদৃশ্য গ্যাস বাতাসে মিশে পরিবেশকে দূষিত করছে। আর দূষিত বাতাস নিশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের ফুসফুসে ঢুকে ক্যান্সার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণসহ শিশুদের বিকলাঙ্গ মতো মারাত্মক অসুখের সৃষ্টি হয়।

নদীও পড়ছে চরম হুমকিতে

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রধান সমন্বয়ক শামীম আহমেদ বলেন, নদীর পানিতে মিশে পানি দূষিত হয়ে জলজপ্রাণীর মারাত্মক হুমকির সম্মুখে পড়তে পারে। তাছাড়া, পোড়ানোর পর যে অ্যাসিড আর রাসায়নিক গলে বের হয়, সেগুলো নদীতে মিশে পানি একেবারে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। ফলে মাছ মরে যায়, গরু-ছাগল সেই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়। গ্রামের মানুষ যদি সেই পানি খায় বা ব্যবহার করে, ধীরে ধীরে কিডনি বিকল, লিভার নষ্ট, রক্তে বিষ জমে যাওয়া, শিশু জন্মগত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

প্রশাসনের পদক্ষেপের ঘোষণা

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা বলেন, অবৈধ সিসা কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযাযী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরুপ ও জমির ফসলের জন্য ক্ষতিকর সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা মোবাইল কোর্ট চালাবো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক রাকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমরা জানতাম না। আজই ডিসি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা নিবো। কারন, ওরা আমাদের কাছ কোনো অনুমতি নেয়নি।

কেকে/ আরআই
আরও সংবাদ   বিষয়:  বাঞ্ছারামপুর   সিসা তৈরি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close