ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিব নগর ইউনিয়নের চরলিউলিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এক সহকারী শিক্ষককে বাদ দিয়ে গেজেটে অন্য একজনকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক গেজেট ভুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষা কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটছে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে বাদ দিয়ে, ২০১১ সালে অব্যাহতি নেওয়া আমেনা বেগমকে গেজেটভুক্ত করার পাঁয়তারা চলছে।
ঘটনার বিস্তারিত
বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেশমা বেগম, মরিয়ম ও স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এর শিক্ষক খসড়া গেজেট হয় ২০১৭ সালে। খসড়া গেজেটে সহকারি শিক্ষক রফিকুল ইসলামসহ বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের নাম অর্ন্তভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১১ সালে অব্যাহতি নেয়া শিক্ষক আমেনা বেগম চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশের আগে এ পদ দাবী করায় ২০১৮ সালে চূড়ান্ত গেজেটে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন শিক্ষক গেজেটভুক্ত হন। বাদ পড়েন রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট পিটিশন নম্বর ৬৪১৬/২৪ দায়ের করেন।
রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, হাইকোর্টে রিট পিটিশন চলমান অবস্থায় প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে ভোলা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এ বিষয়ে পক্ষপাতমূলক একটি প্রতিবেদন দেন। এ কারণে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ভূপেষ রঞ্জন রায় সহকারী শিক্ষক দাবীদার আমেনা বেগমের চাকুরী গেজেটভুক্তকরণ এবং মামলার রায় বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পস্ট মতামতসহ সুপারিশ প্রেরণের নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, মামলা নিস্পত্তি না হতে প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা অবৈধভাবে আমেনা বেগমের নাম চূড়ান্ত গেজেটে অর্ন্তভুক্তের পায়তারা করছে। আমি এর প্রতিকার চাই।
অভিভাবকদের আবেদন
বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের বিঘ্ন দূর করা হোক এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য
আমেনা বেগম দাবি করেন, “আমার অব্যাহতি নেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়।”
তবে বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি আবদুল মালেক ব্যাপারী জানান, ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আমেনা বেগম অব্যাহতি নেয়ার পর ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারী রফিকুল ইসলামকে উক্ত পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমেনা বেগমের এ পদ দাবী করা অযৌক্তিক।
প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম বলেন, “আমেনা বেগমকে সহযোগিতা করার প্রশ্নই আসে না। রফিকুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট করেছে, আমি কারও পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেইনি।”
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আমার কাছে সার্টিফাইড কপি এবং ইনফরমেশন স্লিপ চেয়েছে। রফিকুল ইসলাম মামলা করেছে বিষয়টি আমি জানি। এগুলো পাঠানোর সময় আমি মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে দিব।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবেদনে রফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে তা উল্লেখ করবো।” তবে মামলা চলাকালীন অবস্থায় প্রতিবেদন দেওয়া ঠিক হবে কিনা—এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ভূপেষ রঞ্জন রায় বলেন, “রফিকুল ইসলামের হাইকোর্টে রিটের বিষয়টি আমি জানিনা। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উল্লেখ না করলে এর দায়ভার তার।”
কেকে/ আরআই