বাংলাদেশের আধুনিক প্রবন্ধ সাহিত্য, সমাজ বিশ্লেষণ ও রাষ্ট্রচিন্তায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে আবুল কাসেম ফজলুল হকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি শুধু একজন প্রাবন্ধিক নন, বরং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লেখক, গবেষক, ঐতিহাসিক, অনুবাদক, সাহিত্য সমালোচক এবং সমাজচিন্তক হিসেবে তার পরিচিতি গভীর ও বহুমাত্রিক। নিরপেক্ষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখনী এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি তাকে বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী সমাজে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
আবুল কাসেম ফজলুল হক শুধু একজন লেখক বা অধ্যাপক নন; তিনি ছিলেন এক প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, যিনি সাধারণ মানুষের মুক্তি ও সমাজের অগ্রগতি নিয়ে ভাবতেন। তার প্রবন্ধ, গবেষণা ও সম্পাদনা বাংলাদেশের চিন্তা জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি সমকালীন সমাজে প্রগতির আলোকবর্তিকা হয়ে আছেন।
আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৫৯ সালে তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি মুনির চৌধুরী, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ ও নীলিমা ইব্রাহিমের মতো বিদগ্ধ শিক্ষকের সংস্পর্শে এসে প্রগতিশীল চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করেছেন। এ সময় তিনি শুধু শিক্ষক হিসেবেই নয়, একজন চিন্তাবিদ ও পথপ্রদর্শক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নজরুল রচনাবলীর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি পত্রপত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেছেন এবং ১৯৮২ সাল থেকে লোকায়ত নামক প্রগতিশীল সাময়িকপত্র সম্পাদনা করে আসছেন।
তিনি মনে করতেন যে, সাধারণ মানুষকে সম্মান না দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের কাজ সফল হয় না। তাই তিনি সব সময় শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি স্বদেশ চিন্তাসংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন, যা মুক্তচিন্তক আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ সংগঠন থেকেই তার রচিত বাংলাদেশের মুক্তি ও উন্নতির কর্মনীতি আটাশ দফা প্রকাশ করা হয়।
আবুল কাসেম ফজলুল হক ছিলেন একজন নীতিবাদী রাজনৈতিক দার্শনিক। তার লেখায় উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের চিন্তা ও কর্মমুখী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়। রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন ও ইতিহাস নিয়ে তার প্রাজ্ঞ বিশ্লেষণ পাঠককে নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নতির জন্য জনগণের চেতনা জাগ্রত করা অপরিহার্য। সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে উপেক্ষা করলে সমাজ পরিবর্তনের পথ বাধাগ্রস্ত হয় এমন ধারণা তিনি সর্বদা প্রকাশ করতেন।
তিনি একুশটিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে মুক্তিসংগ্রাম (১৯৭২), নৈতিকতা : শ্রেয়োনীতি ও দুর্নীতি (১৯৮১), রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৯), আধুনিকতাবাদ ও জীবনানন্দের জীবনোৎকণ্ঠা (২০০৪), রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ (২০০৮) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনুবাদ করেছেন বার্ন্ট্রান্ড রাসেলের রাজনৈতিক আদর্শ এবং নবযুগের প্রত্যাশায়। এ ছাড়া ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, স্বদেশচিন্তা ও আকবরের রাষ্ট্রসাধনা তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সাহিত্য ও চিন্তার জগতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ লেখক শিবির পুরস্কার, ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে, যা তার দীর্ঘ সাহিত্যকর্ম ও চিন্তাভাবনার স্বীকৃতি।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মুহাম্মদ আবদুল হাকিম এবং মায়ের নাম ছিল জাহানারা খাতুন। তিনি ফরিদা প্রধানকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান মেয়ে শুচিতা শরমিন এবং ছেলে ফয়সল আরেফিন দীপন। শিক্ষাবিদ শুচিতা শরমিন বর্তমানে (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এবং এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের ছেলে ফয়সল আরেফিন দীপন ছিলেন জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দুর্বৃত্তদের হাতে তিনি নিহত হন।
শিক্ষাজীবন
আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ১৯৬১ সালে তিনি আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময় তিনি মুনির চৌধুরী, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ ও নীলিমা ইব্রাহিমের সান্নিধ্যে আসেন এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন।
কর্মজীবন
আবুল কাসেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা করেছেন। তার লেখা ও বক্তব্যে সবসময়ই জনগণকে সৎ ও ইতিবাচক চিন্তার দিকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। তিনি মানুষের শুভবোধের জাগরণে বিশ্বাস করতেন এবং সাধারণ মানুষকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখতেন। তার মতে, দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মবিশ্বাসে অনুগত; তাই তাদের বিশ্বাসে সরাসরি আঘাত করলে সমাজ পরিবর্তনের কাজ বাধাগ্রস্ত হয় এবং নিজের গ্রহণযোগ্যতাও ক্ষুণ্ন হয়।
সমাজ সংস্কারের ধারায় তিনি ১৯৮২ সাল থেকে লোকায়ত নামক একটি মননশীল পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছেন, যা ‘চার্বাক মতাবলম্বী’ চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করার পাশাপাশি তিনি বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। একুশটিরও অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি এবং নজরুল রচনাবলীর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার লেখা কলাম প্রকাশিত হয়েছে।
২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন, যা বাংলাদেশের মুক্তচিন্তক আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ সংগঠন থেকেই ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের মুক্তি ও উন্নতির কর্মনীতি আটাশ দফা’ প্রচার করা হয়, যার রচয়িতা ছিলেন ফজলুল হক নিজেই। এ ছাড়া তিনি মানুষ শিরোনামে একটি কবিতাও রচনা করেছিলেন।
২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে।
রাজনৈতিক জীবন
আবুল কাসেম ফজলুল হকের রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময়। জীবনের প্রথম রাজনৈতিক মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, তখন তিনি মাত্র চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে। সংগঠনের সলিমুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদেও ছিলেন সক্রিয়।
১৯৭২ সাল থেকে পরবর্তী এক দশক তিনি সুকান্দার একাডেমির সভাপতি এবং বাংলাদেশ উপন্যাস পরিষদর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় তিনি সক্রিয় ছিলেন বাংলাদেশ লেখক শিবিরে। দীর্ঘদিন (১৯৯৬-২০২২) তিনি স্বদেশচিড়া সংঘের সভাপতি পদে আসীন ছিলেন।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি মার্কসবাদী ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তবে মার্কসবাদী দলগুলোর ক্রমাগত বিভাজন, বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আবেগের সঙ্গে গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের কার্যকর সমন্বয় দেখতে না পেয়ে তিনি হতাশ হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি মার্কসবাদী রাজনীতির সব সাংগঠনিক সংযোগ ছিন্ন করেন।
তবে এর আগে ১৯৬০-এর দশকের প্রগতিশীল আন্দোলনগুলো এবং বিশেষ করে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থেকে লেখার মাধ্যমে রাজনৈতিক ধারা প্রকাশের সংকল্প নেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ঢাকা শহরে থেকে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে পরিচিত ও অপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন এবং অর্থ সংগ্রহ করে সহযোগিতা করেন। স্বাধীনতার পরও তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হননি; বরং লেখালেখির মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠনে মনোনিবেশ করেন।
তার লেখায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে তার রাজনৈতিক দর্শন। এ দর্শন গড়ে উঠেছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদ এ চার আদর্শের ভিত্তিতে।
চিন্তাধারা
আবুল কাসেম ফজলুল হক মূলত একজন নীতিবাদী রাজনৈতিক দার্শনিক, যাঁর লেখনীতে সর্বদা উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের আশা ও স্বপ্ন প্রকাশিত হয়। তার চিন্তা কর্মমুখী এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। রাষ্ট্র, সমাজ, মানুষ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, মনোবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, জ্ঞানতত্ত্ব ও ইতিহাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার যুক্তিনির্ভর ও প্রাজ্ঞ গবেষণামূলক রচনা পাঠকের চেতনা ও বিশ্লেষণক্ষমতাকে শাণিত করে সমৃদ্ধ করছে।
তিনি শ্রমিক, কৃষক, দরিদ্র মেহনতি মানুষ এবং মধ্যবিত্ত সাধারণ জনগণের মুক্তি ও কল্যাণকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়েছেন। এজন্যই তিনি প্রথম সারির এক বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রশ্নে তার লেখনী সর্বদা সংগ্রামী ও চিন্তাশীল ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলা একাডেমি প্রকৃত অর্থেই জাতির মননের প্রতীক। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর জাতীয় আকাক্সক্ষায় বাংলা একাডেমির জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঘেরাটোপের মধ্য থেকেও একাডেমি তার স্বাধীন সত্তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছে এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে গবেষণা ও অনুবাদ কার্যক্রমে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। বাংলা একাডেমির সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহুযুগের। এখন এ সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আমি মহাপরিচালক এবং একাডেমি পরিবারের সবার সহায়তায় আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করে যাব।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সভাপতি, বাংলা একাডেমি
প্রকাশিত গ্রন্থাবলী
আবুল কাসেম ফজলুল হক একজন বহুমুখী চিন্তক ও লেখক হিসেবে সমৃদ্ধ গ্রন্থভান্ডার রেখে গেছেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুক্তিসংগ্রাম (১৯৭২), কালের যাত্রার ধ্বনি (১৯৭৩), একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন (১৯৭৬), উনিশশতকের মধ্যশ্রেণি ও বাঙলা সাহিত্য (১৯৭৯), নৈতিকতা : শ্রেয়োনীতি ও দুর্নীতি (১৯৮১), যুগসংক্রান্তি ও নীতিজিজ্ঞাসা (১৯৮৪), মাও সেতুঙের জ্ঞানতত্ত্ব (১৯৮৭), মানুষ ও তার পরিবেশ (১৯৮৮), রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৯), বাঙলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্য (১৯৮৯), আশা-আকাক্সক্ষার সমর্থনে (১৯৯৩), সাহিত্যচিন্তা (১৯৯৫), বাঙলাদেশের রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা (১৯৯৭), অবক্ষয় ও উত্তরণ (১৯৯৮), রাজনীতি ও সংস্কৃতি : সম্ভাবনার নবদিগন্ত (২০০২), সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে (২০০২), সংস্কৃতির সহজ কথা (২০০২), আধুনিকতাবাদ ও জীবনানন্দের জীবনোৎকণ্ঠা (২০০৪), মানুষের স্বরূপ (২০০৭), রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ (২০০৮), প্রাচুর্যে রিক্ততা (২০১০) এবং শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ (২০১১)।
অনুবাদ সাহিত্যে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে বার্ন্ট্রান্ড রাসেল প্রণীত রাজনৈতিক আদর্শ (১৯৭২) এবং নবযুগের প্রত্যাশায় (১৯৮৯) গ্রন্থের অনুবাদ। সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি (১৯৭৮), স্বদেশচিন্তা (১৯৮৫), বঙ্কিমচন্দ্র : সার্ধশত জন্মবর্ষে (১৯৮৯), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত সাম্য (২০০০), মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী : মানবমুকুট (২০০০), এস ওয়াজেদ আলী প্রণীত ভবিষ্যতের বাঙালি (২০০০) এবং আকবরের রাষ্ট্রসাধনা (২০০২)।
এ ছাড়া সাময়িকপত্র সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ১৯৬২-৬৩ সালে সুন্দরম সাময়িকপত্র এবং ১৯৮২ সাল থেকে এখনো চলমান লোকায়ত সাময়িকপত্র সম্পাদনা করছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আবুল কাসেম ফজলুল হক তার সাহিত্য, গবেষণা ও চিন্তাধারার জন্য বিভিন্ন সময়ে একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ লেখক শিবির পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালে তার সাহিত্য ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে তাকে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং ২০০৬ সালে তিনি অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার-এ ভূষিত হন।
কেকে/ এমএস