আজকাল বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে সুগন্ধি বা বডি স্প্রে। অফিস বা পার্টি কিংবা সাধারণ ঘরোয়া পরিবেশে নিজেকে সতেজ ও আকর্ষণীয় রাখতে অনেকেই নিয়মিত পারফিউম ব্যবহার করেন। কিন্তু এই অভ্যাস যদি অতিরিক্ত হয়, তবে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় মিলেছে এমনই ইঙ্গিত।
গবেষকরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করলে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বাজারে সহজলভ্য সস্তা, নকল বা অবৈধ জিনিসের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরো বেশি থাকে।
কেন বিপদ লুকিয়ে আছে সুগন্ধিতে
মূলত পারফিউম বা বডি স্প্রে-তে ব্যবহৃত বেশ কিছু রাসায়নিক উপাদান শরীরে হরমোনের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেথালেটস ও সিন্থেটিক মাস্ক। ফেথালেটস সুগন্ধিকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।
কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত, এগুলো নারীদের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং থাইরয়েডের সমস্যা বাড়াতে পারে। অন্যদিকে সিন্থেটিক মাস্ক স্টেরয়েড বা ইস্ট্রোজেনের মতো প্রভাব ফেলে, যা দীর্ঘমেয়াদে হরমোন-সম্পর্কিত ক্যান্সারের বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই রাসায়নিক উপাদান শরীরে প্রবেশ করতে পারে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কিংবা পানীয় ও খাবারের মাধ্যমে। ফলে এগুলো সরাসরি হরমোন উৎপাদন ও কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, শিশু ও নবজাতকরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
যদিও বিষয় নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মত, প্রতিদিনের জীবনে পারফিউম ব্যবহার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে তা নয়, তবে পরিমিত ব্যবহারই সঠিক পথ। বাজারে পাওয়া অধিকাংশ পারফিউম বা ডিওডোরেন্টের উপাদানগুলোর ওপর এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই ধরনের পণ্যের উপাদান ও রাসায়নিকের ওপর নিয়ন্ত্রণ বা কঠোর নিয়মকানুন নেই। ফলে গ্রাহকরা অনেক সময় বুঝতেই পারেন না কোন পণ্য ক্ষতিকর আর কোনটি নিরাপদ।
কিভাবে সতর্ক থাকবেন
বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন সবসময় বিশ্বস্ত ও নামি ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করুন, প্যাকেটে দেওয়া উপাদান তালিকা ভালো করে পড়ে নিন। একই দিনে বারবার বা অতিরিক্ত পরিমাণে পারফিউম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, হরমোন বা প্রজননসংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া নকল বা অবৈধ পণ্য কেনা এড়িয়ে চলুন।
কেকে/ আরআই