বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ      ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’      নির্বাচনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী : ইসি সচিব      ৪৫তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ফল প্রকাশ, সুপারিশ পেলেন ৫৪৫ জন      বন বিভাগে সুফল প্রকল্পে দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দাম্ভিকতা      ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হলে কৃষি অর্থনীতি টেকসই হবে : কৃষি সচিব      ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      
বেগম রোকেয়া
ধানমন্ডি লেকজুড়ে বইয়ের বাক্স: যেখান থেকে বই পড়তে পারেন যে কেউ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:৫১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডি লেক সেজেছে এক ভিন্ন রুপে। লেকের পাশ দিয়ে হাটলে চোখে পড়ে গাছে ঝুলছে কাঠের ছোট ছোট বাক্স। দেখতে ঠিক পাখির বাসার মতো, তবে ভেতরে পাখির পরিবর্তে সাজানো আছে নানা ধরনের বই। যে কেউ চাইলেই সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন। পড়া শেষে আবার আগের জায়গায় রেখে যাওয়ার নিয়ম।

এমন দৃশ্য আগে দেখা যেত বিদেশের কোনো দেশে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে অনেকেই আফসোস করতেন। কিন্তু এখন সে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজধানীর ধানমন্ডি লেকে।

এ বুককেসগুলো স্থাপনের কারিগর জাকিয়া রায়হানা রূপা, একজন বইপ্রেমী। কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, জার্মানির রাস্তা, বাস স্টেশন এমনকি জঙ্গলে পর্যন্ত বুক সেলফ রয়েছে। মানুষ সেখানে বই পড়ছেন, কেউ কেউ বই দানও করছেন।

রূপা ভাবলেন, জার্মানিতে সম্ভব হলে বাংলাদেশে কেন নয়? সে চিন্তা থেকেই তিনি ঢাকায় একই ধাঁচের ছোট বুকসেলফ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ধানমন্ডি লেকের পাশে তার বাসা হওয়ায়, শুরুটা সেখান থেকেই করেন।

১৬ নভেম্বর, রূপা মাত্র একটি বুককেসে মহিউদ্দিন মোহাম্মদের পাঁচটি বই দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন লেকের বিভিন্ন জায়গায় সাজানো আছে মোট ১০টি বুককেস। প্রতিটি কেসে রয়েছে নানা ধরনের বই।

রূপা বললেন, শুরু থেকেই চারদিক থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। লেকে ঘুরতে আসা সব বয়সের মানুষই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নিয়মিত বই পড়ছেন অনেকে। না পড়লেও, অন্তত হাতে নিয়ে দেখছেন বইগুলো।

বুককেসের নিচে রূপা একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সেখানে লেখা আছে, ‘এখান থেকে বই পড়ুন, পড়া হলে যত্ন করে বুককেসে রেখে দিন। বই বাড়িতে নেওয়া যাবে না।’ পাশাপাশি বই দানের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

একটি বুককেস থেকে বই নিয়ে পড়ছিলেন লামিয়া ইসলাম ছোঁয়া। তিনি বললেন, এ উদ্যোগটি তার অসম্ভব ভালো লেগেছে।

ছোঁয়া নামের একজন বলেন, আমার যে কী খুশি লাগছে, আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না। প্রতিদিন লেকে হাঁটতে আসি। অন্তত ১০ মিনিট হলেও বই পড়ব৷ না পড়লেও চমৎকার এসব বইয়ের কাছাকাছি থাকতে ভালো লাগবে।

গাছে গাছে ঝুলন্ত ছোট ছোট বুককেসগুলো অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। রূপা জানিয়েছেন, ছোট বুককেস করার কারণ হলো এর ফলে সহজে মানুষের হাতের কাছে বই পৌঁছানো যায়।

রুপা বলেন, এ বুককেস আমি মানুষের একদম হাতের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি। ভেতরে ৭–৮টি বই আঁটে। ছোট বলে একটি এলাকায় অনেকগুলো বসানো যাবে। মানুষ যেখানে বসে, প্রতিটি জায়গায় আমি একটি করে দিতে পারব, যাতে কেউ চাইলেই হাত বাড়িয়ে বই নিয়ে পড়তে পারেন।

রূপার এ উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন অনেকে। ভালোলাগা থেকে নিজের সংগ্রহের ১০টি মতো বই বুককেসে রাখার জন্য নিয়ে এসেছেন কাজী মোহম্মাদ নুমান, যিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী।

তিনি বললেন, শুধু প্রথম বুককেস আর বইগুলো আমার অর্থায়নে হয়েছে। এরপর থেকে যত বুককেস আর বই বসানো হচ্ছে, সবই মানুষের ডোনেট করা। একজন তার নানুর ১১৭টি বই দিয়েছেন। আরেকজন ২০টির মতো বই পাঠিয়েছেন। আরেকজন বই কুরিয়ার করেছেন। এসব সবার সহযোগিতাতেই হচ্ছে।

গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই কম রেখে রূপা এমন সব বই বাছাই করেছেন, যা মানুষের বুদ্ধিচর্চায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ ছফার মতো লেখকদের বই রেখেছেন তিনি।

রূপা বলেন, আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের দেশে লাইব্রেরির সংখ্যা খুবই কম। এ যানজটের শহরে লাইব্রেরিতে পৌঁছুতে পৌঁছুতে বই পড়ার মত মানসিক শান্তি থাকে না। আমার মনে হলো, মানুষের হাতে কাছে যদি বইকে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে মানুষ বই পড়বে। যাদের অভ্যাস নাই, তারাও অন্যদের পড়তে দেখে আগ্রহী হবে।

তার এ  কার্যক্রম দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন জানিয়ে রূপা বললেন, সবাই এটাকে এত ইতিবাচকভাবে নিয়েছে, উৎসাহের সঙ্গে শেয়ার করছে সবার সঙ্গে। আমার কাছে প্রচুর বার্তা আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে।

অনেকে রূপার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রূপা বলেন, ‘আমার সঙ্গে যোগ দিয়েই করতে হবে এমন নয়। আপনার নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের উদ্যোগেই করতে পারবেন।’

শেষ বিকেলে লেকের ধারে একটি বেঞ্চিতে বসে সাতোশি ইয়াগিসাওয়ার ‘ডেইজ অ্যাট দ্য মরিসাকি বুক শপ’ বইটির বাংলা অনুবাদ পড়ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। কথা বলার একপর্যায়ে বললেন, ‘মানুষ বেঁচে থাকে তার কীর্তির মধ্যে। এ উদ্যোগটি যিনি নিয়েছেন, তিনি যখন থাকবেন না, তখনও কেউ হয়তো বলবে, ধানমন্ডি লেকে প্রথম বুককেস তিনি বসিয়েছিলেন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।’

কেকে/এজে

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ
তরুণ, যুব ও মেধাবী ছাত্র সমাজকে রক্ষায় সুস্থ সংস্কৃতি জরুরি: রায়হান সিরাজী
৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’
চালাক ছাত্রী

সর্বাধিক পঠিত

নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা রয়েছে: তানভীর হুদা
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
গাজীপুরে রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ডসে সম্মাননা পেল রাজউক

বেগম রোকেয়া- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close