শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন। কেবল বাঞ্ছারামপুর নয়, কৃষি প্রযুক্তি ও আধুনিক লাভজনক কৃষি খামারী হিসেবে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি পরিচিত মুখ। বর্তমানে তিনি কৃষি ক্ষেত্রে একটি ব্রান্ডে পরিণত হয়েছেন।
সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন ২০১২ সালে। ২০১৩ সালে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মামুন ঢাকায় একটি আইটি ফার্ম খুললেও মন পড়ে থাকতো গ্রামে। এক বছর পর নিজ গ্রামে ফিরে এসে শুরু করেন চাষাবাদ। ২০২০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৬)। উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামে ৭ বিঘা জমিতে লেবুর বাগান শুরু করেন। ২ বিঘা জমিতে ফলন শুরু হয়েছে। মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি সাথি ফসল হিসেবে লাউ, সীম, বেগুন,কলা, মাল্টা, কচু, চায়না কমলা ও করলাসহ প্রায় ৫০ রকমের সবজি ও ফল চাষ করেছেন। সবকিছু থেকে খরচ মিটিয়ে আয় করছেন মাসে প্রায় লাখ টাকা।
জানা গেছে, কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন পৈতৃক সূত্রে ২ বিঘা জমি পান। এই জমিতে প্রতি বছর বোরো ধান চাষ করতেন তিনি। ২ বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫ হাজার টাকা। ধান উৎপন্ন হতো ৪৫ মণ। প্রতি মণ ১ হাজার টাকা হিসাবে ধানের মূল্য দাঁড়ায় মোট ৪৫ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে আয় হতো ২ বিঘায় মাত্র ১০ হাজার টাকা। অথচ একই পরিমাণ জমিতে লেবুর বাগান করে তিনি মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের লেবু বাগান ও কৃষি খামারে গেলে তিনি জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজ শুরু করেন। কয়েক বছর কচু, শসা, ভুট্টা, ধান চাষ করে তেমন আয় করতে পারেননি তিনি। পরে নিজ উদ্যোগে প্রথমে ৩ বিঘা জমিতে চায়না-৩ জাতের লেবুর চারা রোপণ করেন। পরে আরও ৪ বিঘা জমিতে লেবুর চারা রোপণ করেন। এছাড়া আধাবিঘা বরইও চাষ করেন।
পাশাপাশি কিছু ভুট্টা, দামি জাতের ধান যেমন পাকিস্তানি বাসমতী, কাটারীভোগ ধান ও নাজিরশাইল ধান চাষ করেন। নিজের জমির পাশাপাশি লিজ নেয়া জমিতে তিনি কৃষি খামার তৈরি করেন। বর্তমানে এখান থেকে যে আয় হয়, সেটি দিয়ে তিনি কৃষি খামারের পরিধি বাড়াচ্ছেন।
উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার কাছে কোন কাজই ছোট নয়। কৃষিকে আমি বাল্যকাল থেকে মনেপ্রাণে লালন করি। শিক্ষকতার পাশাপাশি লেবুর বাগান ও বাড়ির কৃষি খামারে মনোনিবেশ করি। চায়না-৩ লেবু সারা বছর পাওয়া যায়। গত এক মাসে ৩২ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছি। আরও ৩৫ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করতে পারব। অর্থাৎ ২ বিঘা জমিতে গত ৪ মাসে লেবু উৎপাদন হয় প্রায় ৯০ হাজার টাকার। উৎপাদন খরচ হয়েছে খুবই কম। উৎপাদন খরচ বাদে মাসে আয় হয় ১ লাখ টাকার কাছাকাছি। অথচ একই জমিতে বোরো চাষে চার মাসে আয় হয় ১০ হাজার টাকা। ধানের চেয়ে লেবু চাষে লাভ বেশি। লেবুর ফসল হিসেবে সীম ও লাউ চাষ করা হয়েছে। লেবু পাশাপাশি এগুলো থেকেও আয় হবে।’
প্রতিবেশী কৃষক আমান মিয়া বলেন, ‘মামুন মাস্টারের বাহারী ও অফসিজনে লাভজনক চাষাবাদ দেখে আমরা অনুপ্রাণিত। আমরা অনেকে তাকে অনুসরণ করছি।’
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আ. আল মামুন বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেই মামুন মাস্টারের কৃষি চাষের কথা শুনেছি। শিগগিরই তার চাষাবাদ দেখতে যাবো।’
কেকে/ এমএ