সেতু থাকলেও, নেই সংযোগ সড়ক। দুই পাশের মাটি ভরাট না থাকায় ১০ বছর যাবত কোনো কাজেই আসছে না এই সেতু। আর এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের ভুড়ভুড়িয়া গ্রামের হাজারো মানুষ।
এ সংক্রান্ত খবর দৈনিক খোলা কাগজ ও স্থানীয় দৈনিক রুপসী বাংলায় গত ২৭ এপ্রিল(২০২৫) প্রকাশ করলে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দৃঢ়চিত্তে বলেন, "এটা তো সামান্য কাজ। আমি ১৫/২০ দিনের মধ্যে সংযোগ সড়কটি মাটি ভরাট করিয়ে চলাচল উপযোগী করে দিবো।"
এরপর চলে গেছে, প্রায় ৬ মাস। যেই লাউ, সেই কদু। সম্প্রতি এ নিয়ে আবারো কথা পিআইও প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সাথে। তার ভাষ্য" আমি চেষ্টা করেছি। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি। কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে মাটি ভরাটের জন্য ভ্যেকু মেশিন পাওয়া যাচ্ছে না।"
কিন্তু এমন যুক্তি মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। তারা মনে করছেন, "লেবার দিয়েও মাটি ভরাট করে সংযোগ সড়ক মেরামত করা যায়। তাছাড়াও ভ্যেকুর কি অভাব আছে?"
জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে গত ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের কাশেম মিয়ার বাড়ির কাছে ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু নির্মাণের পর থেকে আজ অবধি সেতুর গোড়ায় মাটি না থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে অথচ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ কাজ না করেই প্রকল্পের অর্থ তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঠিকাদার সেলিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, সাড়ে ৩২ লাখ টাকার কাম তো... অতো মনে নাই। ব্রিজ তো টিক্কা আছে!
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ওপর নির্মিত হয় সেতু আর এখন তা মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু সেতু ব্যবহার করতে পারছে না গ্রামবাসী সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী করছেন তারা। সেতুটিতে যানবাহন বা মানুষ চলাচলের স্থলে, মানুষ এখন ধান, মরিচ আবার কেউ কেউ কাপড়চোপড় বা কাঁথা শুকাচ্ছে।
গত কয়েক বছরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর সংযোগ রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ রহস্যজনক কারণে শেষ না করায় সেতুর আশেপাশে জমে থাকছে পানি। আর এ পানি জমাট বেধে থাকায় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ভিজে যাচ্ছে। বর্ষার সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো নাজুক হয়ে যায়, সেতু থাকতেও বিকল্প রাস্তায় কিংবা ভিজে পার হতে হয় হাজারো গ্রামবাসীকে।
জনস্বার্থে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের মাটির কাজ জরুরি ভিত্তিতে ভরাটের দাবি জানান গ্রামবাসী।
ভুড়ভুড়িয়া এলাকার মহসিন মিয়া নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বহু বছর আগে সেতু করে চলে গেছে ঠিকাদার, তারপর থেকে আমরা একদিনের জন্যও এই সেতু দিয়ে পার হতে পারিনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার নেতাদের একাধিকবার বলেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমরা তো অবহেলিত, আমাদের কেনো তারা সুযোগ সুবিধা করে দিবে, ভোটের সময় এলে নেতারা আসে আর ভোট চলে গেলে তাদের চরণ ধুলি পাওয়াটা অবিশ্বাস্য হয় দাঁড়ায়।
মরিয়ম নামে এক নারী বলেন, বয়স হয়েছে এখনো খালের পানিতে নেমে পার হয়ে যেতে হয় ভুড়ভুড়িয়া বাজারে। সেতু কইরা দিছে কিন্তু সেতুতে ওঠার কোনো ব্যবস্থা করে দেয়নি তারা (ঠিকাদার)। ছোট ছোট নাতি-নাতনি নিয়ে ভিজে স্কুলে যাই, ভয় করে কখন আবার ওরা (নাতি-নাতনি) পানিতে পড়ে যায়, কারণ ওরা এখনো সাঁতার শেখনি এখনো। আমরা চাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর গোড়ায় মাটি দিয়ে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিক।
স্থানীয় সংগঠক ও সমাজসেবী আরিফুল ইসলাম মাসুম বলেন, ব্রিজটি এখন এলাকার বিষফোড়া হয়ে দাড়িয়েছে। সংযোগ সেতু না থাকায় এলাকাবাসী নিজেরাই বাধ্য হয়েছে বাঁধ দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। আর এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, সেতুর দুই পাশে থাকা হাজার হাজার একর কৃষি জমির। বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষক এখন টাকা খরচ করে শেলো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দেয়। এর একটা বিহিত চাই।
কেকে/এআর