ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দংয়ে কাঞ্চননগর ডলু রাবারবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের ছাদে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা, বেরিয়ে এসেছে রড ও ইট। পিলারেও দেখা দিয়েছে ফাটল। ৩টি শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের অফিস কক্ষ পুরোপুরি জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে।
শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিদিন পাঠদান চালালেও ঝুঁকির কারণে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে পাশের নড়বড়ে সেমিপাকা ৩টি কক্ষে। তবে সেগুলোও এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে এটি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের পাঠদানে নিয়োজিত আছেন ৪ জন শিক্ষক। তারমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য আছে ১০ বছর ধরে।
১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়ের উত্তারাংশে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহার হওয়ায় ২০২০ সালের দিকে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। পরে ২০২৩ সালে দক্ষিণাংশে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে পাঠদান চালানো হলেও সেটিও এখন ভগ্নদশায়।
এ বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ। তবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। আসবাবপত্রেরও রয়েছে চরম ঘাটতি। ফলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ফারজানা আকতার জানায়, ক্লাস করার সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে। মাঝেমাঝে পলেস্তারা খসে পড়ে। ফলে ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হয়।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টির সময় ভেতরে পানি ঢুকে যায়। জায়গা কম থাকায় আমরা ঠিকমতো বসতেও পারি না।’
বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি রসুল আমিন বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। আমরা চাই, দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুবেদা খানম বলেন, ‘ভবনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এটি নিরাপদ নয়। কক্ষ সংকটে একটি কক্ষেই শ্রেণি ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। একটি ভবন পেলে এই দুঃখ লাঘব হবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাছান মুরাদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠাবো।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ভবন ভগ্নদশায় রয়েছে বলে আমরা অবগত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।’
কেকে/ এমএ