কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বৃহৎ গ্রাম আলীরচরে সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা কার্যত ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গরিব ও অসহায়রা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। স্থানীয়দের দাবি- সরকারি উদ্যোগে দ্রুত মাসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ক্যাম্প চালু করতে হবে।
আলীরচর গ্রামের মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন জটিলতা, শিশু ও নারীদের বিশেষ সমস্যার মতো বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদেরকে দূরবর্তী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল হওয়ার পাশাপাশি সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গরিব ও দিনমজুর পরিবারগুলোর পক্ষে শহরে গিয়ে চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব। অনেকেই চিকিৎসা খরচ বহন করতে না পেরে অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এতে দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রকোপও বাড়ছে।
গ্রামে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম কিংবা রোগ প্রতিরোধমূলক প্রচার নেই। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির জটিলতা ও অন্য নীরব ঘাতক রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে রক্ত পরীক্ষা, ব্লাড প্রেসার বা সুগার টেস্ট, আল্ট্রাসনোগ্রামের মতো মৌলিক পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রোগ নির্ণয় ব্যাহত হচ্ছে।
গ্রামবাসীর দাবি, সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাসে অন্তত একদিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ক্যাম্প চালু করা জরুরি। এতে জেনারেল ফিজিশিয়ান, শিশু বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞসহ অন্য ডাক্তাররা গ্রামে সরাসরি চিকিৎসা দিতে পারবেন। পাশাপাশি গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তারা বলেছেন, ‘ক্যাম্পে ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস চেক-আপ, রক্ত পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় স্ক্যানের ব্যবস্থা রাখা দরকার। একইসঙ্গে গ্রামে পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধমূলক সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।
গ্রামের মানুষ আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আলীরচর গ্রামে সরকারি ক্লিনিক থাকলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় আমরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছি না। গরিব রোগীরা টাকার অভাবে দূরের হাসপাতালে যেতে পারে না। যদি সরকারি উদ্যোগে মাসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ক্যাম্প চালু করা হয়, তবে গ্রামের মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী বিষয়টি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে এনেছেন। তারা আশা করছেন, দ্রুত উদ্যোগ নিলে আলীরচর গ্রামের হাজারো মানুষ নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে এবং সামগ্রিকভাবে এলাকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
কেকে/ এমএ