বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ      ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’      নির্বাচনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী : ইসি সচিব      ৪৫তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ফল প্রকাশ, সুপারিশ পেলেন ৫৪৫ জন      বন বিভাগে সুফল প্রকল্পে দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দাম্ভিকতা      ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হলে কৃষি অর্থনীতি টেকসই হবে : কৃষি সচিব      ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      
ফিচার
সালথায় মাঠজুড়ে সাদা শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে মন কেড়েছে দর্শনার্থীদের
আবু নাসের হুসাইন, সালথা (ফরিদপুর)
প্রকাশ: সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৪ এএম
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বিল-বাওড় কিংবা পুকুরের পানিতে ফুটে ওঠা সাদা শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে মন কেড়েছে দর্শনার্থীদের। শাপলাফুল গুলোকে একটু স্পর্শ করার সাধ সত্যিই অতুলনীয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেই ইচ্ছে কিছুটা পূর্ণতা পায় তখন। শাপলার কোমলতা যেমন মন ছুঁয়ে যায়, তেমনি এর সরল সৌন্দর্যে লুকিয়ে থাকে গ্রামের নিঃশব্দ কাব্য।'

এই খোয়াড় গ্রাম ঘেঁষে রাস্তার দক্ষিণ পাশে দোপের (জলাশয়) পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা। আর এ সৌন্দর্য এক নজর দেখতে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। এসময় কেউ করছেন ক্যামেরাবন্দী কেউবা সৌন্দর্য উপভোগ করছেন শাপলার।

সৌন্দর্যে ঘেরা মায়াভরা শাপলা ফুলের বর্ণনা করেছেন হেমায়েত ফকির ও বকুল মাতুব্বর।

হেমায়েত ফকির বলেন, 'মায়াময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমার শৈশব-কৈশরের বেড়ে উঠা গর্বের ছোট্ট একটি গ্রাম 'খোঁয়াড় গ্রাম'। যে গ্রামটির সৌন্দর্য বর্ষাকালে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলা। সাদা শাপলা যেমন বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। তেমনিভাবে শাপলার সাদা রং আমাদের গ্রামের সহজ-সরল মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, তেমনি পাপড়িগুলোর মতোই সুন্দর এদের মন। গ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের বর্ষার থইথই পানি আর সাথে সাদা শাপলা ফুল আমাদের গ্রামটিকে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য রুপে ধরা দেয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এ সৌন্দর্য রক্ষাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে গ্রামটি হতে পারে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য তীর্থস্থান এবং গ্রামীণ জনপদের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রতিচ্ছবি।'

'দখিনা হওয়ায় এ গ্রামটিতে আকাশের তারারা যেন খসে পড়েছে জলের ওপর। বিপুল জলরাশির উপরিভাগে ফুটে থাকা অজস্র শাপলা শোভা পাচ্ছে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। দেখলে মন ভরে যায়। গ্রাম-বাংলার অকৃত্রিম রূপ ছায়া মায়া সবই যেন ধারণ করে আছে এই শাপলার বুকে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই শাপলার মাঝে সৌন্দর্য খুঁজে পায়। বর্ষা এলে এ গ্রামে শুধু মাটি নয়, হৃদয়ও জেগে ওঠে। আর সেই জাগরণের নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে ওঠে শাপলা ফুল। সাদা, সবুজ আর গোলাপি রঙে সে জানান দেয় প্রকৃতির শুদ্ধ সৌন্দর্যের গল্প।' - কথাগুলো বলছিলেন গ্রামটির আরেক চাকরিজীবী মাফিকুল ইসলাম। 

গোবিন্দপুর গ্রামের বকুল মাতুব্বর বলেন, 'খোয়াড়, গোযালপাড়া, কুষ্টিয়া চকসহ উপজেলার বিভিন্ন বিল ও বাওড়ে ফুটে ওঠছে সাদা শাপলাফুল।  বিকালের ভেসে আসা মৃদু বাতাস বেশ ভালোই লাগে, এছাড়াও রয়েছে দেশি প্রজাতির হরেক রকমের মাছের আনাগোনা। এটি আশেপাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।'

এই বিল বাওড়ে শুকনোর সময় পেঁয়াজ আর পাটের চাষ করা হয়। আর এই ক্ষেতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর গজায় শাপলা ফুলের গাছ। আর এ মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শাপলা ফুলের হাসি দেখতে আশপাশের এলাকার তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমায়।'

স্থানীয় মোস্তফা কামাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'ভাদ্র-আশ্বিন মিলে শরৎ। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ। তবে শুধু সৌন্দর্যই নয়, আমাদের জীবিকারও সুযোগ সৃষ্টি করেছে জাতীয় ফুল শাপলা। খোয়াড় গ্রামের শাপলা ফুল দেখতে নৌকা নিয়ে ভাসতে দেখা যায় অসংখ্য মানুষকে। আমরাও এ শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করি।'

মামুনুর রশিদ নামের এক যুবক বলেন,  এখন চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। তার মাঝখানে চোখ জুড়ানো সাদা শাপলা ফুলের সমারোহ। পানির উপর ফুটে থাকা সাদা শাপলা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। চোখে না দেখলে নজরকাড়া সৌন্দর্যের উপলব্ধি করা যাবে না। নীরব, শান্ত এক দুপুরে শাপলা হয়ে উঠতে পারে আপনার মানসিক প্রশান্তির দিশারী।'

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাপলার ভাসমান ফুলের মধ্য দিয়ে ডিঙি নৌকা কিংবা তাল গাছের ডোঙা চালিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান। যেতে যেতে অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করেন। কেউ কেউ হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় দু-একটি শাপলা ফুল। দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা আবার নিজেরাই ছোট নৌকা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। নৌকার পাটাতন ভর্তি করে শাপলা নিয়ে বাড়ি ফেরে তারা।'

তাদের দাবি, 'একসময় এখানকার মানুষ ও কিশোর-কিশোরীরা বিলঝিলে ও দোপে ডুব দিয়ে শালুক তুলে আনত। শাপলার শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত শালুক সেদ্ধ করে খেয়ে জীবন বাঁচাতেন অনেকে। এখন গ্রামীণ অর্থনীতিও দ্রুত বদলাচ্ছে। মাটির নিচ থেকে শালুক তুলে খাওয়ার লোক তেমন চোখে পড়ে না। তবে অনেকেই শাপলা ফুল সবজি হিসেবে রান্না করে খাচ্ছেন।' 
 
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, 'এ উপজেলার খাল-বিল ও পুকুরে প্রতিবছরই বর্ষায় শাপলা ফুল ফোটে। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসে। আমরাও মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। বাংলাদেশে সারা বছর শাপলা কম বেশি সব জায়গায়ই হয়। তবে বেশি হয় বর্ষা আর শরৎকালে। শাপলা গ্রামের মানুষ সবজি হিসেবে খেতে খুব পছন্দ করে। আর এ ফুলের বীজ ও গুঁড়ো দিয়ে খই বানানো হয়।'

শাপলা ভাজি করে খেতে খুব মজা। এতে পুষ্টিগুণও আছে। জলজ সবুজ ডাটায় আছে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ রয়েছে বলে যোগ করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ
তরুণ, যুব ও মেধাবী ছাত্র সমাজকে রক্ষায় সুস্থ সংস্কৃতি জরুরি: রায়হান সিরাজী
৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’
চালাক ছাত্রী

সর্বাধিক পঠিত

নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা রয়েছে: তানভীর হুদা
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
গাজীপুরে রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ডসে সম্মাননা পেল রাজউক

ফিচার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close