মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পাহাড়ি অরণ্যের গভীরে অবস্থান করছে দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাত ‘হামহাম’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝর্ণার স্বচ্ছ জল এবং দুঃসাহসিক পথের কারণে এটি এখন ভ্রমণ পিপাসুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। জলপ্রপাতটি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীর পাহাড়ি অরণ্যে অবস্থিত।
২০১০ সালে হামহাম জলপ্রপাত উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলেও দুর্গম পাহাড়ি অবস্থান, যোগাযোগের অভাব ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন এটি পর্যটকদের চোখে অদৃশ্য ছিল। তবে বর্তমানে প্রতিনিয়ত পর্যটক-দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জলপ্রপাতের উচ্চতা নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধারণা করা হয় ১৩৫ থেকে ১৬০ ফুট।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থানরত জলপ্রপাত পর্যন্ত পৌঁছাতে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে হয়। পথের মধ্যে রয়েছে উঁচু নীচু পাহাড়, পাথুরে ও কর্দমাক্ত ঝিরি পথ। হাঁটু থেকে কোমর সমান ঝিরিপানি, অসংখ্য বন্য মশা-মাছি এবং রক্তচোষা জোঁক। তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ পেরিয়ে পৌঁছালে পর্যটকরা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
হামহাম জলপ্রপাতের কাচের মতো স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের উচ্চ থেকে নিচে পড়ে। ঝর্ণার প্রবল ধারা পাথর পাথর কেটে ভূমিতে পৌঁছায়। চারপাশে চারিদিক বুনো গাছ ও লতাপাতা, নাম না জানা হাজারো প্রজাতির উদ্ভিদ এবং পাখির কলরব। বর্ষার সময়ে ঝর্ণা নতুন করে যৌবন ফিরে পায়, ঝিরিগুলো কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে এবং স্বচ্ছ জল নদীতে মিশে যায়।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, এখানে সরাসরি যানবাহন নিয়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। উপজেলা সদর থেকে কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত পাকা রাস্তায় বাস, জিপ বা সিএনজি ব্যবহার করতে হয়। বাকি ১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয়। সীমান্তবর্তী এলাকায় ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লী ও দুর্গম বন পথ অতিক্রম করতে হয়।
যাত্রীদের জন্য প্রাথমিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে থাকলে ঝুঁকি কমে। হালকা খাবার, বাঁশ বা লাঠি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী সঙ্গে নেওয়া পরামর্শযোগ্য।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে হামহাম জলপ্রপাত দেশের পর্যটন সম্ভাবনাকে নতুন মাত্রা দেবে।
কেকে/এআর