কক্সবাজারের চকরিয়া থানার হাজত কক্ষে দুর্জয় চৌধুরী (২৭) নামে এক যুবকের রহস্যজনক আত্মহত্যাকে ঘিরে কর্তব্য অবহেলার দায়ে এএসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাশ।
ক্লোজড হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন, থানার এএসআই হানিফ মিয়া ও দুইজন পুলিশ কনস্টেবল ইশরাত হোসেন ও মহিউদ্দিন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো.জসীম উদ্দিন বলেন, থানা হাজতে দুর্জয় চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিতিতে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় দায়িত্বরত পুলিশের কোনো ধরণের গাফেলতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ আত্মহত্যার ঘটনার ব্যাপারে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি জানান।
আত্মহত্যাহননকারী দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী হিন্দু পাড়া এলাকার কমল চৌধুরীর পুত্র। চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন।
এর আগে, শুক্রবার সকাল দশটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব থানা হাজত থেকে তাঁর লাশটি উদ্ধার করেন। লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
থানা হাজত থেকে লাশটি উদ্ধার। ছবি : খোলা কাগজ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম বৃহস্পতিবার রাতে দুর্জয় চৌধুরীকে থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে সোপর্দ করেন। কিন্তু ভোররাতে নিজের পরিহিত শার্ট ব্যবহার করে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম বলেন, দুর্জয় চেক জালিয়াতি করে ও নগদে প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে গতকাল সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ দায়েরের সময় দুর্জয় আমার সঙ্গে ছিলেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানা হাজতে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর আমি চলে আসি। আজ সকালে শুনেছি দুর্জয় থানা হাজতে আত্মহত্যা করেছেন। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা।
থানার সামনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
আত্মহত্যা করা যুবকের পরিবারের সদস্যদের দাবি, কোনো ধরণের ওয়ারেন্ট ব্যাতিত একজন লোককে অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় ডেকে নিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে হাজতে রাখা কতটুকু যৌক্তিক। তাকে আসামিদের সাথে না রেখে কেন আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছিল? পুলিশ কখনো দায় এডাতে পারে না। এটি কখনও আত্মহত্যা হতে পারে না। এ মৃত্যু একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এ ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, থানা হাজতে দুর্জয় চৌধুরীর রহস্যজনক আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে থানা সেন্টার এলাকায় বিচার ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। এসময় বদরখালী-মহেশখালী সড়কের যানচলাচল প্রায় ঘণ্টাখানেক বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন সড়কে শুয়ে প্রতিবাদ করেন।