তিন মাসের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা চলছে সুন্দরবনে। তবুও থামছে না হরিণ শিকার। নতুন ভোক্তা শ্রেণির উত্থানে হরিণের মাংসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সুসংগঠিত শিকারি চক্র। বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিতে তারা এখন প্রায় অদৃশ্য স্টেইনলেস স্টিলের তারে ফাঁদ পেতে রাখছে, এমনকি চেতনানাশক স্প্রেও ব্যবহার করছে টোপ হিসেবে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, দাকোপ ও বরগুনার পাথরঘাটায় একাধিক পেশাদার শিকারি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। জেলে বা মৌয়াল সেজে তারা খণ্ড খণ্ড যন্ত্রপাতি বনে নিয়ে গিয়ে ফাঁদ তৈরি করে, শিকারের পর সেগুলো গাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে রাখে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় চলছে এই চোরাশিকার।
গত দেড় মাসে বন বিভাগ ৪২ কেজি হরিণের মাংস ও তিনটি কাটা মাথা উদ্ধার করেছে। অপসারণ করা হয়েছে ৬,১১২টি ‘হাটা’ ফাঁদ ও ১৭৮টি ছিটকা ফাঁদ, যা পরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সাতটি মামলা, ইউডিওআর ১৬টি ও ওসিআর ১১টি মামলা রুজু হয়েছে। আটক হয়েছে ২৯ জন, জব্দ হয়েছে ২৭টি ট্রলার ও নৌকা। শুধু গত তিন দিনেই আটক ১৯ জন নিজেদের মাছ চোর দাবি করলেও, তাদের হরিণ শিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বন বিভাগ জানায়, চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে জড়িত ১৫০ জন শিকারির তালিকা প্রস্তুত করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে শিকারিরা বনভূমি সম্পর্কে এতটাই অভিজ্ঞ যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলেই মুহূর্তে গহীন অরণ্যে লুকিয়ে পড়ে।
পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বনরক্ষীকে প্রায় এক হাজার ৮শ হেক্টর বন পাহারা দিতে হয়, যা বাস্তবসম্মত নয়। সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে জনগণের সচেতনতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কমানো জরুরি।’
কেকে/এজে