আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের তিনটি বিষয় ছিল। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ (সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫) ও বিদেশ থেকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান এবং দেশের ভিতরেও পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, এর ভিতরের রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫ রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ (সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫) অনেক দূর এগিয়েছে। সভা মুলতবি হওয়ায় আরপিও নিয়ে আগামী সপ্তাহে বসে চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের যে আচরণবিধির খসড়া ছিল, যেটার ওপরে আমরা মতামত নিয়েছিলাম অনলাইনে। সেটার ভিত্তিতে আজকে এই আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ইসি জানান, আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং নির্বাচনে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি থাকবে। এই ব্যালটে প্রতীক থাকবে, তবে প্রার্থীর নাম থাকবে না।
রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে ভোট করার বিষয়ে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার চিঠি পাওয়ার পর এ তথ্য জানান নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নবম কমিশন সভা হয়। দুপুর ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বৈঠক চলে।
আবুল ফজল মো সানাউল্লাহ বলেন, দ্বিতীয় বিষয় আমরা আলোচনা করেছি পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যাপারে আউট অব কান্ট্রি ভোটিং এবং ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোটিং। অর্থাৎ ব্যালট পেপারের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যারা ভোট দিবেন, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রবাসীদের ভোটের পদ্ধতি প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের কাছে শুধুমাত্র সিম্বল ব্যালট যাবে, সেটাই হবে তাদের পোস্টাল ব্যালট। সেই সিম্বল ব্যালটে যতগুলো সিম্বল থাকা দরকার, সেগুলো থাকবে যাতে আমরা পোস্টাল ব্যালটের ট্রাভেল টাইমটা কমাতে পারি। তিনি বলেন, প্রবাসীরা ভোট দেবেন প্রতীকে। ভোট দেওয়ার পর তা পোস্টালের মাধ্যমে ফেরত আসবে। নিবন্ধনের জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে।
ইসি জানান, ইন কান্ট্রি ভোটিংয়ের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভোট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তি ও আইনি হেফাজতে বা কারাগারে থাকা ব্যক্তিরা অনলাইলে নিবন্ধন করে পোস্টালের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রবাসী ভোটারদের সেনসিটাইজ করা, অবহিত করা এবং তাদের ভোটার এডুকেশনের কাজটা করা হবে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটে ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রতি এক লাখ ভোটে খরচ হতে পারে ৬-৭ কোটি টাকা। একটি এডহক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পুরো অপারেশন পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ভোটার হবেন, তাদের আমরা ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে পারব।
নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আচরণবিধিটা প্রার্থী এবং দলের জন্য। কিন্তু এই এআইয়ের ব্যবহার তো অনেকেই করবে। অনেক এন্টিটি আছে, দেশ থেকে করবে, দেশের বাইরে থেকে করবে। তো সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমরা একটা কমিটি ফর্ম করেছি। ইতোমধ্যে তারা কাজ করছেন কীভাবে কী করা যায়। এআই মিসইউজের ব্যাপারে আমরা কঠোরভাবে এখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন ড্রোন ওড়ানো যাবে না।
নির্বাচনের সময় ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যান্ডউইথ না কমিয়ে, কোনো ধরনের সেবাকে বিঘ্ন না ঘটিয়ে নির্বাচনটা যেন করতে পারি। একান্তই যদি বাধ্য না হয় নির্বাচন কমিশন, তাহলে এখনো পর্যন্ত কোনো ইচ্ছা নেই কোনো সেবা বা প্ল্যাটফর্মকে লিমিট করার।
নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ কবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আজকের সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা শিগগির আলোচনা করব। আর সিইসির পক্ষ থেকে ঘোষণাটা আসবে দুই মাস আগে। এই শিডিউল ঘোষণার কাজটা আমাদের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচুর সভা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই গত এক মাসে দুটি সভা করেছেন। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই সংখ্যা আরো ৫০ হাজার বাড়তে পারে। সেনাবাহিনী ৬০ হাজার সদস্য দেবে বলেছে। সেখানে আরো বেশি সদস্য লাগতে পারে।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য কী জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেওয়া। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
শফিকুল বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসী, নতুন ভোটার এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নাগরিক মতামতের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হচ্ছে। প্রায় ৮ লাখ পুলিশ, আনসার ও সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে- যাতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।
কেকে/এএস