‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ দায়সারা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করেছে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি) প্রশাসন। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রচনা প্রতিযোগিতা, কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল, কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা এবং বিকালে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
তবে এ সাধারণ আয়োজনেও মসজিদে দোয়া শেষে তাবারক না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী ফিরে যান। অন্যান্য সাধারণ দিবসের মতোই ছিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের’ আয়োজন। ছিল না কোনো আকর্ষণীয় বা স্বতঃস্ফূর্ত কর্মসূচি। এছাড়াও ছিল না কোনো ভোজ, আনন্দ র্যালি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।
যেখানে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ র্যালি, ভোজ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘জুলাই কর্ণধার’ উদ্বোধন, ‘রিমেম্বারিং জুলাই আন্দোলন’সহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে, সেখানে গোবিপ্রবি প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক মোহাম্মদ হাবিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, “জুলাইকে পকেটে ভরেছে এই ধইঞ্চা প্রশাসন!! প্রশাসনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সৎ প্রশাসক ও শিক্ষক থাকলেও তারা এই ভাই কোরামের জন্য কাজ করতে পারছেন না। আলোচনা সভা আর দোয়া দিয়েই জুলাই বিপ্লব উদযাপন শেষ করেছে প্রশাসন। অথচ এই জুলাই আন্দোলন গোবিপ্রবির ১০ হাজার শিক্ষার্থীর। অনেক ঘাম, রক্ত, সময় আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ বিপ্লব গোপালগঞ্জে এবং সারা বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছে।’
এই প্রশাসনকে আমি ‘ধইঞ্চা’ বলছি, কারণ উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এখানে চামড়াহীন, মেরুদণ্ডহীন কিছু শিক্ষকের সিন্ডিকেট থেকে বের হয়ে বড় পরিসরে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেননি। এ শিক্ষকরা আবার নিজেদের পদ টিকিয়ে রাখতে কথিত কিছু তেলবাজ নেতাদের হাতের মুঠোয় রেখে দেন—যাদের মাধ্যমে নৈতিক ও যুক্তিসংগত আন্দোলনগুলোকেও দমন করা হয় গভীর রাতের ‘পকেট চাঙ্গা’র মাধ্যমে। অবশ্যই কিছু পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাও আছেন, তবে তাঁরা মাঝেমধ্যে উপেক্ষিত হন এবং পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় তাঁদের। অথচ এই বিপ্লব সবার। একজন রাজনৈতিক ছাত্রনেতার মতো একজন সাধারণ শিক্ষার্থীরও সমান প্রাধান্য পাওয়া উচিত, কারণ এই আন্দোলনে সবাই অংশ নিয়েছে।
এই শিক্ষকরা আবার ঐসব তেলবাজ নেতাদের ‘আব্বা’ ডাকতেও দ্বিধা করেন না, কারণ তারা নিজেদের মেরুদণ্ডহীনতা প্রকাশ করতে চান না। জুলাই বিপ্লবের সময় তারা ছাত্রদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেননি বা প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেননি! অথচ এখন তাঁরা পদ আর সুবিধা রক্ষার্থে ভিসি-প্রোভিসিদের পা চাটতেও দ্বিধা করেন না।”
তিনি আরো লেখেন, ‘এই জুলাই বিপ্লবকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা যেত। আয়োজন করা যেত বড় পরিসরের একটি ফেস্ট—যেখানে স্টুডেন্ট টোকেন মানি সিস্টেম চালু করা যেত। প্রতিটি বিভাগের চেয়ারম্যানরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু এই ধইঞ্চা প্রশাসন চামড়াহীন, মেরুদণ্ডহীন কিছু শিক্ষকের সিন্ডিকেট থেকে বের হতে পারেনি। বাঁচুক জুলাই, বাঁচুক প্রিয় গোবিপ্রবি।’
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুলাই ছাত্র আন্দোলন’-এ সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী সমন্বয়ক আল মাহমুদ বলেন, ‘আমি আলোচনা সভায় বলেছিলাম—আজ আমাদের একটি বড় স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজন করার কথা ছিল, যেখানে সকলে অংশ নিতে পারতো। কিন্তু দেখা গেল অনেকেই আসনের অভাবে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান শুনেছে। এই দিনটি প্রশাসন চাইলে আরো জাঁকজমকভাবে উদযাপন করতে পারতো। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ফেস্ট হয়েছে, কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের চাওয়া থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, ‘কিছুদিন আগে কালার ফেস্ট হয়েছিল, সেখানে অনেক ঝামেলা হয়েছে ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রতিক এমন ঘটনার পর আমরা আর ঝুঁকি নিতে চাইনি।’
কেকে/ এমএস