প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠেছে এক অভিনব নিরাপত্তা চৌকি। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের কিছমত কচুরী গ্রামের শালবনের মাঝে, গাছের ডালে বাঁশ, কাঠ ও রশি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি উঁচু মাচা। পা রাখার সিঁড়িসহ পুরো কাঠামোটি যেন একাধারে ঐতিহ্য, সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতীক।
এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন গ্রামের কিছু সচেতন তরুণ শুভ, সাব্বির, ইমন মেহেদী ও তানভীরসহ একদল যুবক, যারা সাম্প্রতিক চুরি ও সন্দেহজনক চলাফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে নিজেরাই নিরাপত্তার ভার কাঁধে নিয়েছেন।
তানভীর বলেন, এক রাতে আমাদের গ্রামে সাতটি গরু চুরি হয়। থানায় জানানো হলেও, দূরত্ব বেশি হওয়ায় তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায় না। তাই নিজেরা দায়িত্ব নিয়েছি। নিজেরা নিরাপত্তার দায়িত্ব না নিলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এই মাচা থেকে পুরো এলাকাটা নজরে রাখা যায়।
সাধারণ কাঠ, বাঁশ ও রশি দিয়ে তৈরি এই মাচা থেকে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করা যায় সহজেই। এটি শুধু প্রযুক্তির বিকল্প নয়, বরং এক ধরনের মানবিক, সামাজিক ও পরিবেশসম্মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যা গ্রামীণ ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ বলেই মনে করেন অনেকেই।
এটি শুধুই একটি পাহারাদারের চৌকি নয়, এটি একদিকে গ্রামীণ ঐতিহ্যকেও ফিরিয়ে এনেছে। এক সময় ধানক্ষেত পাহারা দেওয়ার জন্য এমন মাচা বানানো হতো। এখন তা নতুনভাবে ফিরে এসেছে নিরাপত্তার প্রয়োজনে, তবে একই সাথে পরিবেশবান্ধব উপায়ে।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল তাড়া মিয়া বলেন, আগে ধানক্ষেতে পাখি তাড়াতে কিংবা চোর ঠেকাতে এমন মাচা বানানো হতো। এখন আবার তা ফিরে এসেছে, গ্রামের ছেলেরা নিজেরাই করছে এইটাই সবচেয়ে ভালো লাগছে।
স্থানীয় পারভেজ আহমেদ জামিন জানান, রাস্তার সাথে বাগানের ভিতরে গাছের সঙ্গে বানানো এই কাঠামোটি পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে। কংক্রিট বা যান্ত্রিকতার ছোঁয়া ছাড়াই, প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে বানানো এই মাচাটি গ্রামবাসীর সচেতনতার নিদর্শন। এ যেন আধুনিক নিরাপত্তার মাঝে এক টুকরো গ্রামীণ সৌন্দর্য।
মো. দুলাল মিয়া বলেন, এ উদ্যোগ শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতি, ঐক্য এবং সচেতনতারও নিদর্শন। একে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন ধরনের পারস্পরিক সহায়তা ও দায়িত্ববোধ। যারা পাহারা দিচ্ছেন, তাদের জন্য গ্রামবাসী খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
খোকন মিয়া বলেন, এ মাচা যেন শুধু কয়েকটি কাঠ আর বাঁশের তৈরি একটা উঁচু কাঠামো নয়, এটি গ্রাম বাংলার আত্মা নিরাপত্তা, ঐতিহ্য ও মানবিক বন্ধনের এক জীবন্ত নিদর্শন।
এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শুধু নিরাপত্তার প্রয়োজনে নয়, বরং তরুণদের মাঝে সামাজিক দায়িত্ববোধ, নেতৃত্বগুণ এবং গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলছে। এমন প্রগতিশীল ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ সারাদেশের গ্রামাঞ্চলের জন্য হতে পারে একটি অনুসরণযোগ্য অনুপ্রেরণা।
কেকে/ এমএস