বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির শাইখুল হাদীস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চান তাহলে ইসলামী মূল্যেবোধে দেশ গড়তে হবে। সেজন্য সবাইকে ইসলামী পতাকা উত্তোলন করতে হবে। একমাত্র লক্ষ্য আল্লাহর সমস্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জমিনে বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থার নাম খেলাফত মজলিশ।
তিনি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ঘোষিত সারা দেশব্যাপী জেলা সফরের অংশ হিসেবে শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিশ আদিতমারীর শাখার আয়োজনে, শাপলা চত্বর গণহত্যা, পিলখানা গণহত্যা, জুলাই-আগষ্ট গণহত্যার বিচার ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন।
সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের জেলার প্রধান উপদেষ্টা শাইখুল হাদিস মাওলানা জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস জেলা সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সামাদ কাসেমী।
মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ কোন মানুষের প্রতি বাস্তবায়নের কথা বলেনা। কোন রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়না। আমাদের প্রধান কাজ হল বাংলার জমিনে আল্লাহর প্রদত্ত ইসলাম বাস্তবায়ন করা। আমরা জাতী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের দেশ নানা সম্প্রদায়ে একসাথে বসবাস করার দেশ সম্প্রতি অরণ্য মুজিরের বাংলাদেশ। এই দেশে হিন্দু,বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সকল সংখ্যালঘুরা মুসলমানদের কাছে আমানতের মত প্রতিপালিত হচ্ছে। অথচ আপনারা লক্ষ্য করেছেন ৫ই আগস্টের পর যখন ঝাপটি মেরে বসে থাকা সেই ফ্যাসীবাদীর দোসরদের দ্বারা আমার সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হওয়ার আশাংখা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এদেশের মসজিদের ইমাম,মাদরাসার আলেম, ছাত্র ও ইসলাম প্রেমিক তৌহিদী জনতা প্রতিটি মন্দির, গির্জার সামনে নির্ভয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মত নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিল। আমরা সংখ্যালঘু ভাইদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছি। এজন্য আমাদের স্লোগান একটাই ধর্ম-বর্ণ ভিন্নমত সবার জন্য খেলাফত মজলিশ। আমরা চাই আবার সেই খেলাফতের সোনালী ফসল এবং সোনালী যুগ ফিরিয়ে আনতে বদ্ধ পরিকর। ইনশাআল্লাহ এর জন্য আমাদের সংগ্রাম চলছ চলবেই।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১৬টি বছর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের আলেম-ওলামা, বিএনপি ও জামায়াতের উপর অনেক অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম করেছিল। লাখ, লাখ মিথ্যা মামলায় নেতা কর্মীরা জেলে আবদ্ধ ছিল। হাজার, হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল এবং তার ফ্যাসিবাদী দোসরের এমপি মন্ত্রীরা ব্যাপক দুর্নীতি করে এদেশের সম্পদ কোটি, কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সে এমন ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রী ছিল যে কিছু বললে বা প্রতিবাদ করলেই তাকে খুন-গুম করত। সেই ক্ষমতাবান শেখ হাসিনা এদেশের ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে হেলিকাপ্টার যোগে দেশ থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে চলে গেছে। অথচ এত জনদরদি দেশ সেবক সেই শেখ হাসিনার জন্য দেশে একটুও জায়গা হলনা। সে এখন ভারতে বসে বসে সে দেশের এজেন্ট বাস্তবায়নের জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি অবিলম্ব হুশায়ারী উচ্চারণ করে বলেন এদেশে এক ফোটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেওয়া যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য মামুনুল হক বলেন, আপনাদের সময় ফুরিয়ে আসছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির কাঙ্ক্ষিত সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করুন। এই সংস্কারের জন্য আপনাদের সর্ব প্রথম অঙ্গীকার ছিল অথচ দুঃখের সাথে বলতে হয় আজ পর্যন্ত কোন সংস্কার হয়নি। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২১ সালের হেফাজতেরহত্যাকাণ্ড এবং ২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর পরিচালিত গণহত্যা কাণ্ড। এসব হত্যাকাণ্ডের দোস স্বৈচার শেখ হাসিনাসহ তার খুনি মন্ত্রী সভার এবং তার সকল শীর্ষ্য প্রশাসনের খুনিদেরকে বিচারে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেই বিচারের অগ্রগতি বাংলার মানুষ দেখতে চায়। এই দুটি কাজ করার পর ৩ নম্বর কাজ হল একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। তাই সরকারকে আহ্বান জানাই আপনাদের দায়িত্বে মনোনিবেশ করুন আমরা জেগে আছি। ছাত্র জনতাকে বলি তোমরা যদি জেগে থাক বেঁচে থাকবে বাংলাদেশ। পরিশেষে তিনি আগামী ত্রেয়োদশ নির্বাচনে সামনে রেখে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের পক্ষ থেকে এদেশের মেহনতি মানুষের প্রতীক রিক্সা মার্কা নিয়ে ৩শত আসনের প্রার্থী নিয়ে হাজির হব। পথসভা শেষে তিনি রাতেই পাটগ্রামের আরেকটি পথসভার উদ্দেশ্য রওনা হন। এর আগে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় বিভিন্ন পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
কেকে/এআর