ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, গায়েবানা জানাজা, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে কর্মসূচি শুরু করেন সাজিদের সহপাঠী সংবর্ত ৩৬ ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে যোগ দেন অন্যান্য সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা—‘কাজ না করে বেতন নে, বেতন কি তোর হালাল বে’, ‘ইবির পুকুরে ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে ২ মাস’, ‘কার দায় কে নেবে, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘বেশি আবেগি হইও না তোমরা’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘টাকা লাগলে টাকা নে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দে’, 'শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’সহ বিভিন্ন রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। সে অত্যন্ত ভালো একজন সাঁতারু ছিলেন। পানিতে ডুবে স্বাভাবিক মৃত্যু এটি নয় আমরা নিশ্চিত। ক্যাম্পাসেই থানা হওয়া সত্ত্বেও লাশ ভেসে ওঠার আধা ঘণ্টা পর সেখানে পুলিশ আসে। ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাজিদকে, হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স আসতে সময় লেগেছে ৪০ মিনিট। হল প্রভোস্ট ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর আসেন। এরকম একটি ঘটনায় প্রশাসনের এই আচরণ আমরা মেনে নিতে পারছি না। ক্যাম্পাসের কোথাও সিসিটিভি নেই, লাইটিং নেই যথাযথ। প্রশাসন যদি দ্রুত স্বচ্ছ তদন্ত না করে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
পরবর্তীতে সমাবেশে উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, আমাদের ছাত্রের এমন মৃত্যুতে আমি শোক প্রকাশ করছি। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তোমরা যে দাবি করছো সে দাবি শুধু তোমাদের নয় এ দাবি আমারো। আমার যদি মৃত্যুও হয় তবুও আমি এর সুষ্ঠু বিচার করেই ছাড়ব ইনশাল্লাহ। যদি কেউ এ হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। তোমরা যে প্রতিবাদ করছো এ প্রতিবাদ বন্ধ করবে না চালিয়ে যাবে।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো :
১. সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। ২ থেকে ২.৫ মাস সময় গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রিপোর্ট প্রকাশে সময়সীমা কমিয়ে আনা আবশ্যক।
২. ১৭৫ একর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। কোনো এলাকা যেন নজরদারির বাইরে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজন হলে ডিজিটাল কার্ড বা বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করতে হবে।
৫. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষার্থী অন্ধকারে চলাচল করতে বাধ্য না হয়।
৬. উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা (ডেডলাইন) ঘোষণা করতে হবে এবং তার বাস্তবায়নের নিয়মিত অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে।
৭. ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রবেশের অনুমতি নির্দিষ্ট পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে দিতে হবে।
৮. উপাচার্য, উপউপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা এদের সবাইকে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সমস্যা সমাধানে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৯. মেইন গেটের পাশাপাশি সকল এন্ট্রি পয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।
১০. সাজিদ মারা যাওয়ার পর উপাচার্য, উপউপাচার্য দেখা করা তো দূরের কথা কোনো বিবৃতি দেয়নি কেন তার জবাবদিহি করতে হবে।
১১. হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে দুজন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১২. আমাদের দাবিসমূহ সাত কর্ম দিবসের ভেতর বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
কেকে/এএম