রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৭ বছর পর গত ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (ব্রাকসু) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদন পেয়েছে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর ব্রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে ব্রাকসু নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু ঘোষিত নির্বাচনের তারিখকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বাকবিতণ্ডা। ছাত্রশিবির ও সমন্বয়ক সমর্থিত শিক্ষার্থীদের দাবি- নির্বাচন শীতকালীন ছুটির আগে হোক ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পূর্বনির্ধারিত সময়ে শীতকালীন ছুটি দেওয়া হোক। অপরদিকে ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে শীতকালীন ছুটির পরে নির্বাচন হোক।
ইতোমধ্যে গত ৫ নভেম্বর গঠিত কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. ফেরদৌস রহমান পদত্যাগ করলে ১১ নভেম্বর নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নতুন নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূখে ২৯ ডিসেম্বর ব্রাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু ওই তারিখ শিক্ষার্থীদের পছন্দ না হওয়ায় ফের আন্দোলনের মুখে পূর্বঘোষিত ২৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে এখন ২৪ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হবে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপের সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ক্যাম্পাসে অহরহ দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এত এত আন্দোলনের কারণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমরা পদত্যাগপত্র পেলেও তা গ্রহণ করিনি। আমরা তার সাথে কথা বলে নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবো। তবে তিনি দায়িত্ব নিতে না চাইলে বিকল্প নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও একজনকে ঠিক করে রাখছি, তবুও নির্বাচন ২৪ ডিসেম্বরে হবে বলেই আমরা আশাবাদী।
মূলত, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২১-৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন অবকাশের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ব্রাকসু নির্বাচনের কারণে শীতকালীন ছুটি ৩ দিন পিছিয়ে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পূর্ণনির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীদের ধারণা, শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে ব্রাকসু নির্বাচন করলে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন হবে না। জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে যৌক্তিক সময় বলে মনে করেন তারা। কিন্তু ব্রাকসু নির্বাচনের তারিখ পুনর্বহাল থাকায় ক্ষুব্ধ ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি সেলেক্টিভ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা ইচ্ছে তাই করছে, স্বৈরাচারী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছে।
অপরদিকে ছাত্রশিবির ও সমন্বয়ক সমর্থিত শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে শীতকালীন ছুটির পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্রাকসু নির্বাচন করার দাবি জানান।
তারা মনে করেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে জাতীয় নির্বাচনের কারণে ব্রাকসু নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার, ব্রাকসু নির্বাচন জানুয়ারিতে দিলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথোপযুক্ত সহায়তা পাওয়া নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে।
কেকে/এমএ