কুষ্টিয়ায় খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) ডিলার নির্বাচনে উন্মুক্ত লটারি কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের দোসর অভিযোগ তুলে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা হট্টগোল শুরু করেন, এক পর্যায়ে লটারি কার্যক্রম বন্ধ করে জেলা প্রশাসক সেখান থেকে চলে যান।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বেলা ১১টার সময় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডে ওএমএস ডিলার আবেদনকারী নিয়োগের জন্য উন্মুক্ত লটারির আয়োজন করা হয়। ২১টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ২১৮ জন আবেদন করে। জেলার প্রশাসকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পরে ১০১ জনের আবেদন বাতিল হয়, এবং ১টি ওয়ার্ডে (১৫নং) সঠিকভাবে আবেদন না পড়ায় সেটি বাতিল হলে ২০টি ওয়ার্ডের জন্য মোট ১১৬ জন লটারিতে মনোনীত হয়।
এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রতিটি মনোনীত ব্যক্তিকে ফোন কল এবং এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয় লটারির সময় এবং স্থান।
নির্ধারিত সময় বেলা ১১টার সময় লটারি কার্যক্রম শুরু হয়। ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রথমে ১নং ওয়ার্ডের লটারি সম্পন্ন হয়।
২নং ওয়ার্ডের লটারির জন্য বাছাইকৃত ৬ জনের লাম উল্লেখ করা হলে কুষ্টিয়া জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল হাকিম মাসুদ অভিযোগ তুলে বলেন ২নং ওয়ার্ডের ছয়জনের মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের, এই লটারিতে আওয়ামী লীগের কেউ অংশগ্রহণ করলে আমরা এই লটারি মানি না।
এ সময় শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান পলাশ বলেন, আমরা জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে এই খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু আমাদের বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীদেরই ফোন বা এসএমএস কিছু দেওয়া হয়নি, যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল, এখানে স্বচ্ছভাবে কারচুপি করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এরপরই জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে উপস্থিত বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা হট্টগোল শুরু করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে যায়।
সে সময় লটারি কার্যক্রম বন্ধ করে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান, কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ওএমএস ডিলার আবেদনকারীরা বলেন, যেভাবে জেলা প্রশাসক এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সবার সামনে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে ডিলার নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিল, এটা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য একটা কর্মসূচি, প্রশাসনের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে যাচাই-বাছাই করেই নামগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তারপরেও রাজনৈতিক নেতারা তাদের ফায়দা নিতে এবং অস্বচ্ছভাবে ডিলারশিপ পেতেই এই স্বচ্ছ কার্যক্রম পন্ডল করে দিল।
তারা আরো বলেন যদি আওয়ামী লীগের কেউ থেকে থাকত সেই নামগুলো উল্লেখ করা উচিত ছিল, কিন্তু এভাবে স্বচ্ছ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হয়নি তাদের।
সেখানে উপস্থিত শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোকসেদুল হক কল্লোল বলেন, আমার বাড়ি ৩নং ওয়ার্ডে ২ ও ৩নং ওয়ার্ড পাশাপাশি, এখানে আওয়ামী লীগের কেউ যদি থেকে থাকতো তাহলে অবশ্যই আমি তাদের চিনতাম, আর তাদের অভিযোগ যদি থেকে থাকে সে নামগুলো উল্লেখ করা উচিত ছিল জেলা প্রশাসক মহদয়ের কাছে, কিন্তু তারা তা না করে একটা স্বচ্ছ কাজে উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে বাধা প্রদান করল।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, আমি আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা, এবং যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই উন্মুক্ত লটারির আয়োজন করেছিলাম, তারপরেও বেশ কয়েকজন অভিযোগ তুলেছিল আওয়ামী লীগের নাম লটারি তালিকায় রয়েছে। তাহলে অভিযোগকারীরা নামগুলো উল্লেখ করতে পারত, কিন্তু এভাবে হট্টগোল করা উচিত হয়নি তাদের।
তিনি বলেন, আমি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি, তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তীতে আমি সেভাবেই কাজ করব।
কেকে/এএম