মাত্র দুই থেকে তিন মিনিটের ব্যবধানে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চোরাকারবারিসহ ডজনখানেক মামলার আসামি গর্জনিয়ার ডাকাত শাহিনের সেকেন্ড ইন কমান্ড থিমছড়ি জালাল আহমদের ছেলে রহিম ডাকাতকে আটক করতে পারেনি গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ি। রহিম যেখানে অবস্থান করছিল সেখানে পুলিশ আসার খবর পেলেই সেখান থেকে সটকে পড়ে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদে জানতে পারি ডজনখানেক মামলার আসামি জালাল আহমেদের ছেলে রহিম ঢাকার গর্জনিয়ার মরিচ্যাচর এলাকায় ছিল। খবর পাওয়া মাত্র গর্জিনিয়া পুলিশ পার্টির ইনচার্জ মোহম্মদ শাহজাহান মনিরের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে পৌঁছানোর আগেই মরিচ্যাচর গ্রাম থেকে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ অভিযান চালানোর পরেও তাকে গভীর জঙ্গল থেকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
গর্জনীয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান মনির জানান, গোপন সংবাদের উপর ভিত্তি করে গর্জনিয়ার জুমছড়ির মরিচ্যাচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পুলিশ আসছে এমন সংবাদ পেয়ে মরিচ্যাচর দোকান থেকে সটকে পড়ে। যতটুকু ধারণা করা হচ্ছে পাশে যেহেতু গভীর জঙ্গল রয়েছে সেখানে এ রহিম ডাকাত অবস্থান নিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড়ের থিমছড়ি এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমদের ছেলে রহিম উল্লাহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হওয়ার পর গর্জনিয়ার আলোচিত ডাকাত শাহিনের দলে যোগ দেন। ভারি অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার কারণে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না স্থানীয়রা।
এদিকে ডাকাত শাহিন যৌথবাহিনীর কাছে আটক হওয়ার পর থেকে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রহিম গর্জনিয়ার জুমছড়ি এলাকার মইন্নাকাটা এলাকায় বসবাস করছে বলে জানা যায়। রাতের বেলায় বিভিন্ন দোকানে সিগারেট নিতে আসে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। শুরুতে মইন্নাকাটা হয়ে শতশত গরু নিয়ে গেলেও এখন শাহিন কারাগারে থাকার কারণে অনেকটা ভাটা পড়ার কারণে কোন রকম গা ডাকা দিয়ে অপেক্ষা করছে কখন শাহিন বের হবে এবং তাদের রাজত্ব আবার শুরু হবে। এখন শাহিন কারাগারে থাকলেও নিজে দায়িত্ব নিয়ে মাঝেমধ্যে মায়ানমার সিমান্ত থেকে মাদক আনছে বলে খবর রয়েছে। আর এ কাজে সহযোগিতা করছে বেশ কয়েকটি ইয়াবা মামলার আসামি স্থানীয় মৃত মৌ হাসেম এর ছেলে আব্দুল মোমেন প্রকাশ বদু।
গোপনসূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার মডেল থানা ও রামু থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় হত্যা, বিষ্ফোরক, ডাকাতি, জমি জবরদখলসহ ডজন খানেক মামলা রয়েছে। তার মধ্যে রামু থানায় ২০১৭ সালে ১ মার্চ হত্যার চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়। এ মামলায় বনবিভাগের একজন কর্মচারিকে বেদড়ক মারধর করে ডাকাত রহিম উল্লাহ। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি মারা যান বলে জানা যায়।
অন্যদিকে হত্যাসহ আরো বেশ কিছু ধারায় অভিযোগ এনে ২০১৩ সালের ১৫ ফ্রেরুয়ারি কক্সবাজার মডেল থানায় এফআইআর হয় এবং একই থানায় ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী ধারা -৬ এ আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। একই তারিখে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে জি আর মামলা হয়। এই মামলায় চার্জশিট ভুক্ত আসামি বলে জানা যায়।
এদিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত -৪ এ বেশ কিছু ধারা দেখিয়ে সিআর মামলা রয়েছে তার বিরোদ্ধে। এই মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানা যায়। অপরদিকে ২০২৩ সালে ৫ নভেম্বর রামু থানার এফআইআর -৮ ও জি আর মামলা নং ৬১৯, একই বছর ৩ ফ্রেরুয়ারি আরেকটি জি আর মামলা হয় যার এফআইআর নং ৩ ও মামলা নং ৪৬ বলে জানা যায়।
একটি বিশেষ সূত্র বলছে, গর্জনিয়ার ত্রাস রহিম উল্লাহর এতগুলো মামলা থাকার পরেও ওয়ারেন্ডভূক্ত আসামি হওয়ার পরেও দোকানে ঘুরে বেড়ানো ও সাধারণ মানুষকে জানের ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রান চান এলাকাবাসী।
থিমছড়ি এলাকার ওসমান জানান, রহিমের কারণে আমরা কথা বলতে পারি না। সে যা বলে তাই আইন হয়ে যায়। তাকে যদি একবার আইনশৃংখলা বাহিনী ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে তবে অনেক তথ্য বের হবে এবং অনেক অস্ত্র উদ্ধার হবে।
ভুক্তভোগী জিয়া জানান, বাংলাদেশের সকল স্তরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আকুল আবেদন জানাইতেছি যে, গর্জনিয়া ইউনিয়নের-থিমছড়িগ্রামে প্রায় ছোট বড় (দুই হাজার) জনসাধারণের বসবাসের মধ্যে (এই সন্ত্রাসীর পরিবারের লোকজন বাদ দিয়ে) গোপনে সকল স্তরের নিরপেক্ষ জনসাধারণের কাছ থেকে তদন্ত করলে? এই সন্ত্রাসীর নির্যাতন নিপীড়নের কথা বেরিয়ে আসবে! প্রকাশ্যে কেউ বলবে না। কারণ সে একজন অত্যন্ত ভয়ংকর প্রকৃতির লোক। এবং চট্রগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলের সকল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদলের সাথে সম্পৃক্ত।
কেকে/ এমএস