বিএনপির প্রবীণ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য ঘিরে দলীয় ঘাঁটি কিশোরগঞ্জে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক, ক্ষোভ ও হতাশা। তার বক্তব্যের ভাষা ও অবস্থান নিয়ে অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করছেন ক্ষুব্ধ মনোভাব।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতার ফেসবুক পোস্টে স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে ‘ভাই এবার থামুন;। এই বাক্যটি যেন হয়ে উঠেছে চাপা ক্ষোভ ও গভীর রাজনৈতিক হতাশার প্রতিচ্ছবি।
সাবেক রাজনৈতিক দলের প্রতি ফজলুর রহমানের অতিভক্তিপূর্ণ প্রশংসা, একদলীয় শাসন ও বাকশাল পদ্ধতির অতীতকে পাশ কাটিয়ে করা মন্তব্য, এবং চলমান ছাত্র গণআন্দোলনের প্রতি বিরূপ মনোভাব সব মিলিয়ে অনেক নেতাকর্মীর মনে সন্দেহ তৈরি করেছে, তিনি আদৌ বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী কি না।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, ‘যাকে দেবতুল্য করে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে, তিনিই একদিন জাতির বিশ্বাসঘাতকতা করে আত্মরক্ষায় পরিবারসহ পালিয়ে গিয়েছিলেন। রক্তাক্ত রাজপথে ফেলে গিয়েছিলেন নিরস্ত্র জাতিকে।’ এ বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে রাজনৈতিক অতীতের বঞ্চনা, ক্ষোভ এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতার কষ্টদায়ক স্মৃতি।
বিতর্ক সবচেয়ে বেশি তৈরি করেছে ফজলুর রহমানের কথিত উসকানিমূলক মন্তব্য, যা আলেম-ওলামাদের তাচ্ছিল্য এবং বিএনপি-সমর্থিত ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধাচরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কর্মীরা বলছেন, এ বক্তব্য শুধু আন্দোলনের নেতাদের অপমান করেনি, বরং দলীয় চেতনা ও সংগ্রামের আত্মাকে আঘাত করেছে। এতে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পোস্টে আরো বলা হয়, আমরা যারা বিএনপির আদর্শে রাজনীতি করি, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনাকে অনুসরণ করি—তাদের মনেই এখন শঙ্কা, এ ধরনের বক্তব্য দলকে আগামী নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ফেসবুক পোস্টের সবশেষে লেখা হয় ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নই, গণতন্ত্র ও ইসলামবিরোধী নই। বরং আমরা ২৪ সালের ছাত্র গণআন্দোলনের পক্ষেই আছি। দেশনেত্রী ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথেই থাকব ইনশাল্লাহ।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফজলুর রহমানের বক্তব্য কেবল একজন নেতার ব্যক্তিগত মত নয়, বরং বিএনপির অভ্যন্তরীণ দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বের দুর্বলতা ও বিভ্রান্তির প্রতিফলন। এতে আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তা যতটা ফুটে উঠেছে, ততটাই প্রকাশ পেয়েছে দলীয় ঐক্যের সংকট।
কেকে/এএস