কুমিল্লার মুরাদনগরে সেই আলোচিত ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে চাচ্ছেন বাদী। তিনি পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই মামলা করেছিলেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। তবে মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, আমি ১০ জনের শান্তি চাই। সবাই শান্তিতে থাকুক। আমার যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে, এখন মামলা করে কী লাভ। আমি মামলা তুলে নেব। আমার স্বামী বলেছেন, মামলা তুলে নিতে। যেন এসবে আমি না যাই। পরিবারের কারো সঙ্গে পরামর্শ না করেই মামলা করে ফেলছিলাম। এখন সবাই চায় মামলা তুলে নিতে। মামলা তুলতে কেউ আমাকে চাপ দেয়নি। কেউ টাকার লোভও দেখায়নি।
প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী সম্পর্কে তিনি বলেন, ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম। ওই টাকা লেনদেন নিয়ে আমাদের মাঝে কথা হতো।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ হয় মুরাদনগর থানায়। এ ঘটনার দুইদিন পর ওই নারী বিবস্ত্র একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।
ফজর আলীর বাবার বলেন, আমার ছেলে এক সময় আওয়ামী লীগ করত। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ওই মহিলার বাড়িতে নিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে। শুনেছি তার দুই পা ভেঙে ফেলেছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ফজর আলী ছাড়া অপর চারজনের বিরুদ্ধে ভিকটিম বাদী হয়ে নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সরজমিন গিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বিদেশে আছেন। ভুক্তভোগী নারী মাঝে মাঝে স্বামীর বাড়ি থেকে পিতার বাড়িতে বেড়ানোর জন্য আসা-যাওয়া কালে ফজর আলীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়ারাও আওয়ামীলীগ আমলে ভুক্তভোগী ওই নারী ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন কাজের জন্য অবস্থিত হলে অভিযুক্ত ফজর আলী তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন সেই সুবাদে তাদের মাঝে সক্ষতা গড়ে ওঠে। তাদের এসব কাজ অনেকদিন হলো এলাকাবাসীর একাংশের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। এলাকাবাসী একাংশের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাধিক সদস্য রয়েছে। ভুক্তভোগী ওই নারী পিতার বাড়িতে আসলে ফজর আলীকে রাতে তার নিজ পিতার বাসায় আসতে বলেন। বিষয়টি স্থানীয় ছেলেরা বুঝতে পেরে একই ঘরে ভুক্তভোগী নারী ও ফজর আলীকে বিবস্ত্র অবস্থায় ধরে ফেলে। পরবর্তীতে বিএনপি নেতারা হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ বলে প্রচার করে ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়।
পাচকিত্তা গ্রামে আবুল কালাম ও ছাব্বির বলেন, অভিজুক্ত ফজর আলী মুসলমান হওয়ায়, সেহেতু বাহেরচর হিন্দু পাড়ার লোকজন শলা পরামর্শ করে। ভুক্তভোগীর সম্মান রক্ষার্থে পুলিশ খবর দেয়। ভুক্তভোগী নারীকে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। মূলত উক্ত ঘটনাটি দুইজনের পূর্বের সম্পর্কের জের ধরে সংঘটিত হয়েছে।
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, এটা একটা পরকীয়ার ঘটনা। ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই বাড়ির দিকে রওনা করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। এ সময় ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ তার সঙ্গীরা তাদেরকে হাতেনাতে আটক করে। আটকের পর ফজর আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিম বলেন, আমরা আগে থেকেই জানি ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি সেদিন রাতে মূলত ফজর আলী এবং ওই নারী পারস্পরিক সম্মতিতে ওই ঘরে ছিলে। কিন্তু তাদেরকে হাতেনাতে ধরার জন্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন ফাঁদ পেতে থাকে।
কেকে/ এমএস