নোয়াখালীর হাতিয়ায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী ছালেহ উদ্দিনের (৪৫) বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২০ জুন) রাতে উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজচরা গ্রামে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিন শনিবার (২১ জুন) বিকালে আহত গৃহবধূকে তার স্বজনরা পুলিশের সহায়তায় হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে স্বামী ছালেহ উদ্দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে স্ত্রীকে চাপ দেন। এতে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছালেহ উদ্দিন ঘরে থাকা তার বাবা-মাকেসহ অন্যদের বের করে দিয়ে ঘরের দরজা আটকে দেন। এরপর স্ত্রীকে খাটের পায়ার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন এবং যৌনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া ঢেলে দেন।
গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু সকালে যখন তার মা-বাবা হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন স্বামীর পরিবার বাধা দেয়। পরে বিষয়টি জানিয়ে জাহাজমারা পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করলে পুলিশ গিয়ে গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
গৃহবধূর বাবা আবদুল খালেক জানান, প্রায় দশ বছর আগে তার মেয়ের সঙ্গে ছালেহ উদ্দিনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই জামাই নানা সময় টাকা-পয়সার জন্য মেয়েকে চাপ দিত এবং নির্যাতন করত। বিভিন্ন সময় তাকে একাধিকবার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, প্রায় এক লাখ টাকার মতো। এরপরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, একাধিকবার সালিশ বসিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এবার তো সরাসরি শারীরিকভাবে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ইউসুফ সোহাগ বলেন, সিনিয়র নার্স দিয়ে রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তার গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জাহাজমারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর রহমান বলেন, এক গৃহবধূকে তার স্বামীর বাড়িতে মারধর ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে অভিযান চালাই এবং নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।
অভিযুক্ত ছালেহ উদ্দিন সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের নুরুল হকের ছেলে। তিনি পেশায় ইটভাটার শ্রমিক সর্দার। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, একজন নারীকে এভাবে নির্যাতন করার পরও অভিযুক্তকে এখনো গ্রেফতার না করা দুঃখজনক। তারা দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
কেকে/এএম