চাটখিলের সন্তান টিপু শামসুদ্দিন পূর্ব লন্ডনে রেইনহ্যাম ক্রিকেট ক্লাবে বেড়ে ওঠে। তার বেড়ে ওঠার গল্পের বর্ণনা প্রকাশ করা হলো।
লন্ডন ভাইকিংয়ের প্রেসিডেন্ট এম জে হাসান এর ফেসবুক থেকে-
পূর্ব লন্ডনের একটি উপশহর রেইনহ্যাম—এক নিরিবিলি শহরতলী। যেখানে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, যেন জীবনেরই আরেকটা রূপ। রেইনহ্যাম ক্রিকেট ক্লাবের প্যাভিলিয়ানে বসে আছে আশরাফুল ইসলাম জনি, আর ঠিক তখনই এগিয়ে এলেন টিপু ভাই, হাতে এক প্যাকেট ক্রিস্পস আর এক কাপ চা। হাসিমুখে বললেন, “চা খেয়ে নাও, খেলা শুরু হয়ে যাবে।” এতটা সাধারণ অথচ আন্তরিক আতিথেয়তা যেন বলে দিচ্ছিল, এই মানুষটি শুধু ক্রিকেটার নন, এক প্রাণবন্ত গল্পও বটে। তিনি তখন পরের ব্যাটসম্যান, পুরো গিয়ারে তৈরি, কিন্তু যেন সেই প্রস্তুতির ভেতরেও স্মৃতির জানালা গুলো খুলে বসে আছেন। গল্পের মতো করে বলতে লাগলেন—রেইনহ্যাম ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে তার পথচলা, কীভাবে এই ক্লাবটা ধীরে ধীরে তার জীবনের অংশ হয়ে উঠল।
রেইনহ্যাম ক্লাবটির রয়েছে এক গৌরবময় ঐতিহ্য এবং খেলোয়াড়দের প্রতিভা শনাক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা প্রশংসনীয়। খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে ১৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করায় টিপু এই ক্লাবের নজরে আসেন। প্রথমে খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করলেও, এখন তিনি জুনিয়রদের গাইড, মেন্টর এবং প্রেরণা। ব্যাট-বল শেখানোর বাইরেও তিনি খেলোয়াড়দের শেখান ধৈর্য, মনোসংযোগ আর শৃঙ্খলা। ক্রিকেটের সেই অদৃশ্য দিকগুলো, যা স্কোরবোর্ডে দেখা যায় না, কিন্তু ক্যারিয়ার গড়ে দেয়।
তার হাস্যরসের মনোভাব তার প্রশিক্ষণ পদ্ধতিকে আরো উপভোগ্য করে তোলে। পরিশ্রমের ফলও তিনি পেয়েছেন—ক্লাব সেক্রেটারি হয়েছেন, পাশাপাশি রেইনহ্যাম সেকেন্ড টিমের অধিনায়ক। তবে তার স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই, তিনি চান আরো বড় পরিসরে ক্রিকেটকে ছুঁয়ে দেখতে।
লন্ডনের বিখ্যাত এনসিএল লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনের অধিনায়ক টিপু শামসুদ্দিন। এ লিগে বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম ও আকবর আলী খেলেছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন যুক্তরাজ্যে প্রচুর খেলোয়াড় আসছেন এবং বিভিন্ন লিগ গঠিত হয়েছে, ক্রিকেটে প্রবেশ অনেক সহজ হয়েছে। টিপু যখন শুরু করেছিলেন, তখন দৃশ্যপট ছিল একদমই আলাদা। ২০১০ সালের দিকে খুব বেশি খেলোয়াড ও অর্গানাইজার ছিল না পূর্ব লন্ডনে। সেই সময়ে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম, যিনি নিজের চেষ্টায়, ধৈর্য আর বিশ্বাস দিয়ে তার ওয়েস্টহাম ক্রিকেট ক্লাবের যাত্রা ছিল খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক!
এখন যারা যুক্তরাজ্যের ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই টিপু ভাইয়ের হাতে গড়া।
এই টিপু ভাইয়ের মতো মানুষরা যেন এক নীরব বিপ্লবী, যারা ক্রিকেট দিয়ে জীবন বদলান, মাঠের বাইরেও খেলে যান এক অন্য খেলা। তার মতো লোকদের জন্যই তো আমরা বুঝি—ক্রিকেট শুধু খেলার নাম নয়, এটা এক ধরনের দায়িত্ব, এক ধরনের ভালোবাসা, যেটা জীবনের শেষ ওভারের আগ পর্যন্ত খেলে যেতে হয়।
উল্লেখ্য, টিপু শামসুদ্দিন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সাধুরখিল গ্রামের রাজার বাড়ির আবুল খায়েরের ছেলে।
কেকে/এজে