শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র      জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন      গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে      গুলিস্তানে মার্কেটে আগুন, নিয়ন্ত্রণে সার্ভিসের ১১ ইউনিট      ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ : তথ্য উপদেষ্টা      যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      
দেশজুড়ে
বগুড়ার শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী ‘জামাইবরণ মেলা’ শুরু
বাদশা আলম, শেরপুর (বগুড়া)
প্রকাশ: রোববার, ২৫ মে, ২০২৫, ৬:১৬ পিএম

বগুড়ার শেরপুরে ‘জামাইমেলা খ্যাত’ ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী মেলা শুরু হয়েছে আজ থেকে। তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর জ্যেষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার থেকে মেলা শুরু চলে তিন দিন। তিন দিনব্যাপি মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের মাঝে বিরাজ করে অন্যরকম আমেজ। থাকতে হবে আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতি। গৃহ আঙিনাকেও সাজাতে হবে ভিন্নভাবে—যেন সাজ-উৎসবের ক্ষণ।

প্রায় ৫ শতাব্দী থেকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ৩ কিলোমিটার অদূরে কুসুম্বী ইউনিয়নের কেল্লাপোশী নামক স্থানে এ মেলা বসছে। এবার বেশ জমজমাট মেলা হবে বলে আশাবাদী আয়োজক কমিটি।

স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মাদারের মেলা’ ও ‘জামাইবরণ’ মেলা নামেও পরিচিত। তবে এ মেলাটিকে যে যেই নামেই ডাকুক না কেন, সকলে বিশ্বাস করে যে মেলাটিই এ ‘মেলার রাজা’। তাই তো স্থানীয় ও আশপাশের মানুষ থেকে শুরু করে বহু দূর থেকেও অনেকে ছুটে আসেন এ মেলায়।

জনশ্রুতিতে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে বৈরাগনগরের বাদশা সেকেন্দারের ছেলে ছিলেন গাজী মিয়া। আর কালু মিয়া ছিলেন তার দত্তক পুত্র। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা দুই ভাই রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির-সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণনগরে আসেন। ব্রাহ্মণ রাজা মুকুটের ছিল সাত পুত্র ও এক কন্যা চম্পাবতী। বাংলা সাহিত্যে যা ‘সাত ভাই চম্পা’ নামে পরিচিত। চম্পাবতী গাজীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার কাছে যান।

মুকুট রাজা ছিলেন যবনদ্বেষী ব্রাহ্মণ। কালু ঘটক হিসেবে রাজা মুকুট রায়ের দরবারে গিয়ে গাজীর সঙ্গে চম্পাবতীর বিয়ের কথা উত্থাপন করলে কালু বন্দী হন। ফলে গাজীর সঙ্গে যুদ্ধ বাধল মুকুট রাজার। মুকুট রাজার কাছ থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য গাজী মিয়া কেল্লাপোশী নামক একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। যুদ্ধে রাজা মুকুটের পরাজয় ঘটে। গাজী ও চম্পাবতী পরিণয়ে আবদ্ধ হন।

গাজী ও চম্পাবতীর সেই শুভ পরিণয় হয়েছিল জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষ্যে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। তখন থেকেই চলে আসছে এ মেলা।

এ মেলা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে থাকে নানা আয়োজন। এরই একটি হচ্ছে মাদার খেলা। মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগ থেকে গ্রামে গ্রামে চলে এ খেলা। একটি বড় বাঁশকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ও নানা রঙে সাজিয়ে সেটির বিভিন্ন স্থানে চুল লাগিয়ে ১৫-২০ জনের একটি দল বেরিয়ে পড়ে। ঢাক-ঢোল, গান-বাজনার নানা সরঞ্জাম আর লাঠি নিয়ে তারা গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের পাড়া-মহল্লাতেও খেলা দেখায়। দলটি মেলা এলাকায় অবস্থিত মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে তা জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার তা শেষ করে।

আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দ উল্লাস আর উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় থাকে লাখো মানুষ। তারা প্রয় এক সপ্তাহ আগে থেকেই নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মেলা উপলক্ষ্যে সবাই নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনকে বাড়িতে দাওয়াত দিচ্ছেন। নিমন্ত্রণে থাকে নতুন-পুরোনো জামাই-বউ রয়েছেন তালিকার শীর্ষে।

শ্বশুরালয়ে আসা জামাইরা ভিন্ন মৌজ মাস্তিতে থাকেন। কারণ মেলা উপলক্ষ্যে জামাইদের মোটা অঙ্কের সেলামি দিয়ে থাকেন শশুররা। তখন জামাইবাবুরা সেই সেলামি আর নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেলা থেকে খাসি কিনে শ্বশুরবাড়িতে আনেন। এমনকি বড় বড় মাটির পাতিল ভর্তি করে মিষ্টান্ন সামগ্রী, সবচেয়ে বড় মাছ, মহিষের মাংস, রকমারি খেলনা কেনেন। এ ছাড়া শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে দেখেন। তাদের সার্কাস, নাগোরদেলা, হুন্ডা খেলা, জাদু খেলা, পুতুল নাচ দেখিয়ে দিনব্যাপী আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন।

এ মেলায় সার্কাস, নাগোরদোলা, পুতুল নাচ, বিচিত্রা, হোন্ডাখেলা, কারখেলাসহ নানা অনুষ্ঠান চলে। সেই সঙ্গে জুয়াড়িরা পাল্লা দিয়ে মেলা দেখতে আসা সহজসরল মানুষকে ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। মেলায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটার ধুম। দূরদূরান্ত থেকে আগত বিক্রেতারা এখানে দোকান সাজিয়ে জাঁকিয়ে বসেন।

এ মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র, মিষ্টি-ফলমূল, নানা জাতের বড় বড় মাছ, কুটির শিল্প সামগ্রী, মহিষ ও খাসির মাংস, রকমারি মসলা। আর মেলা থেকে রকমারি মসলা, তুলা, কাঠের আসবাবপত্র, বড় বড় ঝুড়ি, চুন সারা বছরের জন্য কিনে রাখেন গ্রামের সাধারণ মানুষও।

যেহেতু মেলাতে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঘটে, তাই সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের বিশে টহলের ব্যবস্থার কমতি থাকে না।

শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, আমি এ থানায় নবাগত। ওই মেলার ঐতিহ্যের কথা জেনেছি। তবে যাই হোক মেলায় কোনো অশ্লীল যাত্রা, জুয়া বা অনৈতিক কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সালথায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন গ্রেফতার
৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র
বৈরী আবহাওয়ায় মাছ শিকারে যেতে পারছে না জেলেরা
জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন
শালিখায় বাড়ছে পাটকাঠির কদর

সর্বাধিক পঠিত

‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
সুলতানগঞ্জকে যদি বন্দর করা যায় তাহলে করা হবে: ড. এম সাখাওয়াত
‘কাঁচামিঠে ফলের ছড়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
একমণ চালের দামেও মিলছে না এক কেজি ইলিশ

দেশজুড়ে- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close