আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে রংপুর বিভাগের খামারি ও গৃহস্থরা এবার আশাবাদী—ভারত থেকে গরু না এলে স্থানীয় পশু বিক্রি করে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। গেল বছর ভারতীয় গরুর অতিরিক্ত সরবরাহ থাকায় অনেকেই আশানুরূপ দাম পাননি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, বাজারে দেশি গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া নিয়ে প্রস্তুত খামারি ও চাষিরা।
এখনও ঈদের পশুরহাট আনুষ্ঠানিকভাবে না বসলেও অনেক এলাকায় বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। খামারি ও চাষিরা পশু সাজিয়ে তুলছেন হাটে তোলার জন্য। এবার প্রতিটি গরু ১০-১৫ হাজার টাকা এবং ছাগল ২-৩ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রির আশা করছেন খামারি ও চাষিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১৯ লাখ ৮০ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে, যেখানে কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ১২ হাজার পশু। ৫ লাখ ৬৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থেকে যাবে, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
রংপুরের চাহিদা: ২,২৪,৭৫২টি পশুর, গাইবান্ধায়: ১,২৬,৩০৫টি, কুড়িগ্রামে: ২,২২,৮৪০টি, নীলফামারীতে: ২,২৩,১৬৬টি, লালমনিরহাটে: ১,৭১,৭৭৭টি, দিনাজপুরে: ২,৬৩,৬৪৬টি, ঠাকুরগাঁওয়ে: ৭৫,৩৬১টি ও পঞ্চগড়ে: ১,০৪,৩০০টি।
খামারি ও চাষিরা বলছেন, গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরু লালন-পালন এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। একদিকে ঘাসের ঘাটতি, অন্যদিকে দানাদার খাদ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে এবার পশুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
লালমনিরহাটের দুড়াকুটি গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘গেল বছর তিনটি গরু বিক্রি করেছিলাম ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়, অথচ আশা ছিল ১ লাখ ৮০-৯০ হাজার। ভারতীয় গরুর কারণে আমি কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। এবার চারটি গরু প্রস্তুত করেছি। আশা করছি প্রতিটি গরু ৬৫-৭০ হাজার টাকা করে দাম পাবো।’
কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর গ্রামের খামারি জুলহাস হোসেন (৫০) বলেন, ‘গতবার ভারতীয় গরু আসায় আমাদের লোকসান হয়েছিল। এবছর আটটি গরু প্রস্তুত করেছি, আশা করছি ভালো দাম পাবো। তবে খাদ্যের খরচ অনেক বেড়েছে।’
রংপুর ডেইরি ফার্মার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান বলেন, ‘রংপুর বিভাগে এবার পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল রয়েছে। বাইরে থেকে পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না। বরং এখান থেকে উদ্বৃত্ত পশু দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো যাবে।’
রংপুর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আব্দুল হাই সরকার জানান, ‘এবার পাশ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে গবাদিপশু আসছে না। সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। ফলে স্থানীয় খামারি ও চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবে। রংপুর বিভাগের আট জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ২৯৫টি হাট বসবে কোরবানির পশুর জন্য।’
কেকে/ এমএস