মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কচুরিপানা ভর্তি খালে জোয়ারের পানির তোড়ে শতাধিক গরু ভেসে যাওয়ার ঘটনায় ভেসে উঠছে একের পর এক মরা গরু। হঠাৎ এত বড় আর্থিক ক্ষতিতে দিশেহারা ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারগুলো। আসন্ন ঈদুল আজহায় বিক্রির উদ্দেশ্যে লালনপালন করা হচ্ছিলো গরুগুলো। গরু মারা যাওয়ায় স্বপ্নভঙ্গ কৃষক পরিবারগুলোর। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা দাবি করেছেন তারা।
খবর নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার (২৩ মে) বিকাল ৪টায় গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন কচুরিপানা ভর্তি একটি খালে জোয়ারের পানির তোরে ভেসে যায় শতাধিক গরু। এ ঘটনায় কিছু গরুর সাতরে তীরে উঠতে পারলেও স্থানীয়ভাবে ৪১টি গরু মারা গেছে বলে দাবি করা হয়। তবে উপজেলা প্রশাসনের করা তালিকায় মারা যাওয়া গরুর সংখ্যা ২৯টি বলে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে শনিবার (২৪ মে) দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেন, তাদের আর্থিক সহায়তা করার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব সুজন খান বলেন, 'ভাটি বলাকী গ্রামের ২৫/৩০টি পরিবারের ৫ শতাধিক গরু আছে। অধিকাংশ গরু আসন্ন ঈদুল আজহায় বিক্রির উদ্দেশ্যে লালনপালন করা হচ্ছিল। গরুগুলো গ্রামের পার্শ্ববর্তী চরে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ঘাস খেয়ে চর থেকে গ্রামের দিকে ফেরার পথে তীব্র স্রোতে শতাধিক গরু পানির সাথে ভেসে যায়। প্রথমে অনেকগুলো গরু নিখোঁজ থাকলেও পরে আশেপাশের এলাকা থেকে কিছু গরু উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশত গুরু মারা গেছে'।
ভুক্তভোগী কৃষক মহাসিন বেপারী বলেন, 'সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে আমার। আমার পাঁচটি গরু মারা গেছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ছয় লক্ষ টাকা। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকারিভাবে যদি আমাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান না করা হয় তবে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না'।
ভুক্তভোগী কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ' আমার তিনটি গরু পানির তোড়ে ভেসে মারা গেছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার লক্ষ টাকা। দরিদ্র একটি পরিবারের যদি চার লক্ষ টাকা চলে যায় তাহলে আর কি থাকে বলেন? আমি মনে হয় আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না। আসলে ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য গরুগুলো লালন পালন করছিলাম এখন সব স্বপ্ন শেষ'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রাকিবুল হাসান বলেন, 'মারা যাওয়া গরুগুলোকে নিয়ম মেনে মাটি চাপা দিতে বলা হয়েছে যাতে পরিবেশ দূষিত না হয়। যেসব গরু সাতরে তীরে উঠতে পেরেছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি গরু অসুস্থ। আমরা সেগুলোকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি'।
বিষয় সম্পর্কে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, 'খবর পাওয়া মাত্রই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। আমাদের তালিকা অনুযায়ী ১৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখনো পর্যন্ত ২৯টি গরু মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি আমরা। আমি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকবো। তাৎক্ষণিকভাবে আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেছি। দেখি আর কি করা যায়'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজেরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, 'আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী ১৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাদের সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব'।
কেকে/এআর