আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গলী ও সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও শিমুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) এর বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়ে ইউএনও বরাবর মঙ্গলবার (২০ মে) অভিযোগ দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম পল্লব নামের এক ব্যক্তি। তিনি উত্তর রাজাপুর গ্রামের মো. সোহরাব হোসেনের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞ আদালতকে অবমাননা করে একটি পরিবারকে সর্বশান্ত ও সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন যে, উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১৭নং উত্তর রাজাপুর মৌজার পৈত্রিক জমি ৭.৮০ একর সংক্রান্ত বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের রায়, ডিক্রি ও বর্তমানে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এবং পাশে সরকারের ১০.৪৫ একর জমি রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নানান মাধ্যমে অভিযোগকারী জানতে পান সহকারী কমিশনার (ভূমি), ঝিকরগাছা; শিমুলিয়া ইউনিয়নের তহশিলদার, ঝিকরগাছা এর সাথে স্থানীয় প্রায় ১০/১৫জন আলাপ-আলোচনার করে ৩ দফার শেষ পর্যায়ে গত ১৯/০৫/২০২৫ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ৭টার সময় আবেদনকারীর পুকুর ও সরকারি জমি থেকে আনুমানিক প্রায় ২০লক্ষ টাকার মাছ লুটপাট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার নিকট দ্রুত তদন্ত পূর্বক বিবাদীগণের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন শহিদুল ইসলাম পল্লব।
এছাড়াও ঘটনার বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১৭নং উত্তর রাজাপুর মৌজার পৈত্রিক জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বশান্ত অসহায় পরিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর ০২/০৪/২০২৪, ১৭/০৯/২০২৪, ০১/১০/২০২৪, ১৪/১০/২০২৪, ২৯/১০/২০২৪ইং সহ আরো অনেক তারিখ অনুযায়ী সহযোগিতা চেয়েও আইনগতভাবে কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি ছেলে শহিদুল ইসলাম পল্লব ও সংবাদের তথ্য অনুসন্ধানে সংবাদকর্মীরা মাঠে নামলেও তথ্য দিতে ব্যর্থ উপজেলা প্রশাসন। উক্ত বিষয় নিয়ে কোন স্বার্থে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এটা নিয়ে জনসধারণের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখা গেছে। তবে ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিবার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিলেও তিনি কোন অদৃশ্য ক্ষমতার নিকট জিম্মি। ঘটনার বিষয়ে শহিদুল ইসলাম পল্লব যত বার অভিযোগদায়ের করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতর থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দফতরে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় অসহায় পরিবারের ওপর অমানষিক নির্যাতন। তার ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দ্বারা শহিদুল ইসলাম পল্লবের বাড়ির ওপর গিয়ে তার পিতা মো. সোহরাব হোসেনকে তুলে নিয়ে এসে হুমকি-ধামকি ও মারার জন্য ক্ষিপ্ত হয়। তাৎক্ষনিক বিষয়টা সংবাদকর্মীদের নিকট আসলে সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাটি শান্ত করার জন্য কঠোর ভাবে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা দেন। এই বিষয়ে তাৎক্ষনিক সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নিকট যোগাযোগ করে ঘটনাটি শান্ত করেন।
আরো জানা যায়, একই মাসে অসহায় পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তির পুকুর হতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দ্বারা শিমুলিয়া ইউনিয়নের তহশিলদারকেও হুমকি-ধামকি দেন এবং তাৎক্ষনিক বিষয়েরর ওপর একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতর এ ঘটনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থার গ্রহণের জন্য শরণাপন্ন হয়নি। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা এখন ধামাচাপা পড়েছে। পূর্বেও এই জমির বিষয়ে দফতরে বিভিন্ন সময় নাটকীয় কার্যক্রম পরিচালানা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুর রহমান বাটুল গং-কে দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করেছেন সরকারি দফতরের সাবেক কর্মকর্তারা। এরপরও বর্তমানে ১৯ মে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতাধরী আর একপক্ষদের দ্বারা পুনঃরায় পুকুর থেকে শেষ সম্বল টুকুও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) দেওয়া ইউঃ ভূঃ অঃ শিমু-২০২৫, ১৫৫/ভূমি, ১১/০৩/২০২৫ইং তারিখের প্রতিবেদনে রায়, ডিক্রি ও নিষেধাজ্ঞার মামলার বিষয়ে তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি পর্যাবেক্ষণে নিয়ে তামাদি মওকুফ করতঃ সরকার পক্ষের অপিল গ্রহণ করেছেন মর্মে বিজ্ঞ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়েছেন শিমুলিয়া ইউনিয়নের তহশিলদার আবুল খায়ের। তার মনউক্তি প্রতিবেদনের কারণে একটি অসহায় পরিবার সর্বশান্ত ও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
উল্লেখ্য, ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট সংবাদকর্মীরা তথ্য অধিকার আইনে তথ্যের জন্য আবেদন করলে নিধারিত সময়ের পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তথ্য দেওয়ার জন্য একাধিকবার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) লিখিতভাবে বিভিন্ন স্মারকে অবগত করলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার নির্দেশনাকে আমলে নেন না। এই বিষয়ে প্রায় তিন মাস পরে তিনি সংবাদকর্মীদের জানান এ ঘটনার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ২৬/২০২৪ ও ৯৯/২০২৪ নং মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় এ মামলার বিষয়ে ৪৯৩ দিনের তামাদি হয়েছে এবং আগামী ১৬/০৬/২০২৫ইং তারিখে মামলা গ্রহণের ওপর শুনানি রয়েছে। কিন্তু অপর দিকে শিমুলিয়া ইউনিয়নের নায়েব বিজ্ঞ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতকে অসম্মান করে রায়, ডিক্রি ও নিষেধাজ্ঞার মামলার বিষয়ে তিনি মনগড়া প্রতিবেদনে দাখিল করছেন। আর এই প্রতিবেদনকে স্থানীয়রা আমলে নিয়ে এ জমি থেকে মাছ লুট করে তাদেরকে সর্বশান্ত ও সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে বলে দাবি করেন শহিদুল ইসলাম পল্লব।
ক্ষতিগ্রস্থ শহিদুল ইসলাম পল্লব বলেন, শিমুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর বারিক গং আমার বাড়ির ওপর গিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আমার পিতাকে তুলে নিয়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি ধামকি প্রদান করেন।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল খায়ের বলেন, মাছ ধরার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বিজ্ঞ আদালতের বিপক্ষে গিয়ে প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জিপি অফিসের পরামর্শ নিয়ে এসিল্যান্ড স্যারকে প্রতিবেদন দিয়েছি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাভিদ সারওয়ারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে কল কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ভুপালী সরকার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।
কেকে/ এমএস