জয়পুরহাটে কালাইয়ে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চারদিকে ঘন সবুজের সমারোহ। বসন্ত বাতাসে ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও সোনালী ধানের শীষ।ধানের কাঁচা পাকা শীষ দেখে আনন্দে বুক ভরে ওঠে কৃষকের মন। আর এই সবুজের ঢেউয়ে সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে করে তুলেছে আরো বিকশিত, সেই সঙ্গে অনেক জমিতে দেখা যাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। এ উপজেলায় এবার বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখায় কৃষকের চোখে-মুখে ফুটেছে হাসি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা।
কদিন পরেই সবুজ ধানগাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
এ জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে ধান উৎপাদনের দিক থেকে কালাই শীর্ষে রয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভারসহ ১১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই বোরো ধানের সোনালী শীষ বের হয়েছে। কৃষকরা এই উপজেলায় কীটনাশকের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পার্চিং (জমিতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা) পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফল পেতে শুরু করেছে। এজন্য এ বছর রোগ বালাই দেখা দিয়েছে কম। তবে কিছু কিছু জমিতে ধানে রোগ দেখা দিলে কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ করায় সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে যে, উপজেলার আহম্মেদাবাদ, জিন্দারপুর, পুনুট,উদয়পুর, মাত্রাই ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ এ উপজেলার গ্রামের মাঠ গুলো বোরো ধানের চাষাবাদে ভরে গেছে। কৃষকরা বলেন, ধানক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। বোরো ধান লাভ জনক ফসল। তাই কৃষকরা বোরো মৌসুমকে ঘিরেই নানা স্বপ্ন দেখে। এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাষিরা ধান রোপণ করেছেন। যথা সময়ে সার, কীটনাশক ও সেচ দিতে পারায় ধান গাছ হয়েছে ভালো। আরো বলেন, পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হওয়ার ফলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় মাঠ জুড়ে হলুদ ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের হাসি।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের সহযোগীতায় ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত বোরো ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। আর কয়েক দিন পরই ধান কাটা শুরু করা যাবে। এখন পর্যন্ত ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এ বছর বিদ্যুৎ ও সারের কোনো সংকট দেখা দেয়নি। যার কারণে ফসলের চেহারাও অনেক সুন্দর হয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তবে এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে।
আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন হাতিয়র গ্রামের কৃষক কাজী আলোয়ারুল বলেন, আমি এ বছর চার বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে যথাসময়ে ভালো পরিচর্যা করায় আমার জমিতে ধান ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধানকাটা শুরু করেছি,ফলনও ভালোই হচ্ছে।
এ উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন কামিরুল ইসলাম বলেন,আমি এবার ১৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। ফলনও ভালোই হয়েছে। আশা করি বাজারে দামও ভালো পাবো।
এ উপজেলার আরেক কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, জমিতে সময়মতো পানি দেওয়ায় ধান সবুজ হয়েছে। এবার ঝড় বৃষ্টি না হলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আমরা অনেক উপকৃত হব।
কালাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ধান কাটা শুরু হবে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো বলেন, যেহেতু বোরো আবাদের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া হয়ে থাকে, সে কারণে আমরা কৃষক পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছি। মাঠের ধান ৮০ ভাগ পরিপক্ক হলেই কেটে ঘরে তোলা হয়।
কেকে/এএম