‘আমাদের ভিশন: সৎ, দক্ষ দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরী’ উপপাদ্য কে সামনে রেখে মেধাবী- দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান ও কুরআন দিবস উপলক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে কুরআন বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রোববার (১১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে সাত টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে এ শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়।
প্রথম বর্ষের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার হলেও শিক্ষার্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি রাষ্ট্র। এমতাবস্থায় শিবিরের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
ছাত্রশিবির জাবি শাখার সেক্রেটারি জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ও সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগাহসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উদ্ভোধন বক্তব্যে ছাত্রশিবির জাবি শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মপদ্ধতির চতুর্থ দফার অধীনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। আগামী দিনে আপনাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমাদের পাশে পাবেন। আমরা আমাদের যায়গা থেকে প্রশাসনের কাছে দাবী পৌঁছানো ও নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সহায়তা করে থাকি।’
বিশেষ মেহমানের বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেট রয়েছে শতকরা অর্থনীতির ১.৬৯ভাগ। এমতাবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব না। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য অর্থ সরবরাহ করা প্রয়োজন। একটি জাতির অমূল্য রত্ন যুবসমাজ। আবু সাইদের মতো অসংখ্য যুবক জুলাইয়ে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ তাদের সৎ, যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার যথোপযুক্ত উদ্যোগ নেই। দিন শেষে আমাদের আত্মোসমালোচনা করা প্রয়োজন। শিবিরের ব্যক্তিগত রিপোর্টে আত্মসমালোচনার একটি কলাম আছে। বিগত সময়ের প্রতিবন্ধকতাগুলো এখন অনেকটাই নিরসন হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সকলের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সততা, দক্ষতা ও নিয়মানুবর্তিতার কারনে অনেক কিছু অর্জন সম্ভব হয়েছে। সফলতার জন্য সৎ, দক্ষ, খোদাভীরু ও দেশপ্রেমিক হওয়া জরুরি। আমি চবির ছাত্র হিসেবে দেখেছি, ১৯৮৫ সালের চাকসু নির্বাচনে শিবির পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে বিজয়ী হয়েছিল। তাদের প্যানেলে একজন অমুসলিম প্রার্থীও ছিল। সমাজকল্যাণমূলক কাজের অংশ হিসেবে তারা শিক্ষাবৃত্তির আয়োজন করেছে। আমি আশা করছি তাদের এ কাজ আরো বেগবান হবে এবং শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা সমাধানে অগ্রগামী হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘ইসলাম প্রচারিত হয়েছে পৃথিবীর সেরা একজন রাজনীতিবিদের মাধ্যমে। হুদায়বিয়ার সন্ধি, মদিনা সনদ ইত্যাদি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সাক্ষী। ইসলামে ইনক্লুসিভিটিকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুরা হুজরাতে বলা হয়েছে, সামাজিকতার কথা বলা হয়েছে। একজন মানুষ প্রকৃত মুসলিম হতে চাইলে সুন্দর আচরন ও গুণের অধিকারী হতে হবে। আমাদের শেষ গন্তব্য হলো মালিকের বিচার। সেখানে পার পেতে হলে কুরআন অনুসরণের বিকল্প নেই। যত বেশি ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা যায় ততবেশি অমূল্য জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব।’
এর আগে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে কুরআন বিতরণ করে ছাত্রশিবির জাবি শাখার নেতৃবৃন্দরা। প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর মাঝে কুরআন বিতরণ করে তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল ভারতে কুরআন বাজেয়াপ্তের একটি রিট দায়ের হয়। এর প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১ মে মিছিলে গুলিতে ৮ জন নিহত হলে দিনটিকে কুরআন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কেকে/ এমএস