শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫,
৭ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: ফের পিএস বিতর্কে আসিফ      ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও      রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই      ইতা‌লির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ঢাকা সফর বাতিল      সাগর-রুনির পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজউকের প্লট      মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      
খোলাকাগজ স্পেশাল
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ভয়ঙ্কর এক মৃত্যুফাঁদ
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৩ মে, ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম আপডেট: ০৪.০৫.২০২৫ ১২:৩১ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর এক মারণফাঁদে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও আরকান আর্মির পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরিত হয়ে প্রায়শই হতাহতের শিকার হচ্ছেন সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের মানুষ। এতে যেমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তেমনি পঙ্গুত্ব বরণ করে নিচ্ছেন অনেকে। 

মাইন ও আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে হতাহত হচ্ছেন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে ১ মে পর্যন্ত বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ হারান এক তরুণ। 

বিস্ফোরণের ঘটনা বেশি ঘটেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায়। মাইন বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই পঙ্গু হয়ে গেছেন। জীবিকা হারিয়ে অনেকেরই এখন দুর্বিষহ জীবন। চিকিৎসা ব্যয়সহ নানা খরচ সামাল দিতে হতাহতদের পরিবারও অনেকটা নিঃস্ব।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাতে ব্যাপক হারে প্রাণঘাতী ভূমিমাইন ও গোলাবারুদ ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজ্যটির বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে। মূলত আরকান আর্মির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র দলের সদস্যদের ঠেকাতেই মাইন পুঁতে রাখে দেশটির সেনাবাহিনী। বান্দরবান ও কক্সবাজার অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমানা রয়েছে ২৭১ কিলোমিটারের মতো। আরাকান আর্মিও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ব্যাপক হারে মাইন পুঁতে রেখেছে, যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
 
মাছ ধরে ফেরার সময় গত ৬ এপ্রিল মাইন বিস্ফোরণে আহত হন মোহাম্মদ ফিরোজ (৪৫)। বিস্ফোরণে তার ডান পা উড়ে গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের শূন্যরেখার অদূরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফিরোজ জানান, তার বাড়ি থেকে অদূরেই নাফ নদী। সেই নদী পার হয়ে লালচর এলাকায় কিছু মাছের ঘের রয়েছে। তিনিও মাছ ধরতেই গিয়েছিলেন। সেখানে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন।

বিস্ফোরণের পর থেকে সংসারের ভরণপোষণ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ফিরোজ। তিনি বলেন, ৪ ছেলে ২ মেয়ে আর স্ত্রী কে নিয়ে সংসার তার। তার আয়েই মূলত সংসারের খরচ চলত। তিনি বলেন, এক মাস ধরে হাসপাতালে আছি। মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা সংগ্রহ করে স্ত্রী চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কখন ছাড়া পাই, জানি না। ছাড়পত্র পেলেও অনেক দিন চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হবে। কীভাবে যে চিকিৎসার খরচ জোগাব, আর কীভাবেই বা সংসারের খরচ মেটাব, ভেবে কূল পাই না।

এর আগে গত বছরের ৭ জুলাই মাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারান মো. জোবায়ের। নিহত জোবায়েরের মা রাবেয়া খাতুন (৪৫) টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় সড়কের পাশে পলিথিন আর বাঁশে তৈরি একটিতে খুপরিতে থাকেন। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ছেলে জোবায়ের ছিল ঘরে। এর মধ্যেই এলাকার মানুষের সঙ্গে নাফ নদীর লালদিয়ার চরে কাঁকড়া ধরতে যায় সে। সেখানে বোমা (মাইন) ফেটে আমার ছেলেটার ডান পা উড়ে যায়। এরপর মারা গেছে। ছেলের মৃত্যুর পর অভাবে দিন কাটছে জানিয়ে রাবেয়া বলেন, মেয়েটা মানুষের বাসায় কাজ করে। আমিও কাজ পেলে করি, না পেলে মানুষের কাছ থেকে কিছু খুঁজে-চেয়ে নিয়ে দিন পার করতে হয়। এর চেয়ে কষ্ট করে মানুষ থাকতে পারে কি না, জানি না। অনেক কষ্টে আছি।

চলতি বছরের ২৯ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ইউনিয়নের চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের ৩০০ মিটার অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন আবদুস সালাম (৩৭)। মাইন বিস্ফোরণে তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তিনি বলেন, সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে তার পানের বরজ, কলাবাগানসহ নানা খেত রয়েছে; সেখানে কাজ করছিলেন। খেতে একটি বানর দেখে তা তাড়াতে গিয়ে সীমান্ত পার হয়েছিলেন। এর মধ্যেই হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে তার একটি পায়ের গোড়ালিসহ একটি অংশ উড়ে যায়। 

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়ার মধ্যবর্তী রেজু আমতলী সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে মনছুর আলম (৩০) নামের এক বাংলাদেশি কাঠুরিয়া আহত হন। বিস্ফোরণে তার বাঁ পা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। 

এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১২ জন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা, ফুলতলী, জারুলিয়াছড়ি, নিকোছড়ি, ভালুখাইয়া, জামগছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে শূন্যরেখা থেকে মিয়ানমারের ২০০ থেকে ৩০০ মিটার অভ্যন্তরে গিয়ে আহত হয়েছেন তারা। 

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের মতো। সব স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। বিজিবির টহল দলকে ফাঁকি দিয়ে তাই অনেকেই মিয়ানমারের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারাই মাইন বিস্ফোরণে আহত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কেউ যাতে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে জীবনঝুঁকিতে না পড়েন, সে বিষয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকাতেই মাইন পোঁতা রয়েছে। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সঙ্গে থাকা সীমান্তে মাইন স্থাপন করা হয়েছে বেশি। সামান্য অসতর্ক হলেই মাইনের ফাঁদে হতাহত হচ্ছেন মানুষ। 

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। হতাহত ব্যক্তিরা কেন এসব এলাকায় যাচ্ছেন, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। 

নাইক্ষ্যংছড়ির ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম বলেন, আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় মাইন বসিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই ঘটছে আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা মাইনে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের ঠেকাতেই আরাকান আর্মি মাইন পুঁতে রেখেছে। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  বাংলাদেশ   মিয়ানমার   সীমান্ত   ভয়ঙ্কর   মৃত্যুফাঁদ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ফের পিএস বিতর্কে আসিফ
ভাগ পেতেন ডিসি-এসপিরাও
রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞরাই
কুমিল্লায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত
খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

মদনে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় সাবেক কমিশনার গ্রেফতার
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষি সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তার অভিযাত্রা
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
নীলফামারীতে বালিকাদের ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত
‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close