মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাটসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বিকাশ প্রতারণা ও মাদকের কারবারে জড়িয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এসব প্রতারকচক্রের সদস্যরা রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। আগে যাদের কুঁড়েঘর ছিল, তাদের এখন পাকা দালান। ভাঙা সাইকেলের বদলে চড়ে বেড়াচ্ছেন দামি মোটরসাইকেলে।
এসব ডিজিটাল প্রতারক স্থানীয়ভাবে ‘টোপ পার্টি’ নামে পরিচিত। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার গ্রাহকদের টার্গেট করে তারা অভিনব কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ নিজেদের বিকাশ বা নগদ প্রতিনিধি পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট সমস্যা বা পুরস্কার পাওয়ার নাম করে ফাঁদে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। কেউ কেউ আবার গাড়ি-বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
শুধু প্রতারণাই নয়, বরিশাট, রামনগর, বারইপাড়া, বরিশাট নতুন পাড়া এলাকাগুলোতে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের ব্যবসাও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ৫০০ পিসেরও বেশি ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তবে মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বরিশাট হাইস্কুল, ঈদগাহ গোরস্থান, নয়নশাহ স্ট্যান্ড, চারা বটতলা, পূর্ব পাড়া প্রাইমারি স্কুলের পাশের ক্লাব ও দক্ষিণ পাড়া এলাকাগুলোকে মাদকের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয়রা। রাতে গ্রামের কিছু বিকাশের দোকানে দেখা যায় অস্বাভাবিক লেনদেন, চলছে অনলাইন জুয়ার আসরও।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বরিশাট নয়নশাহ পাড়ায় প্রতারক চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে বকুল বিশ্বাসের ছেলে ইমন ও লিমন। এদের সঙ্গে আছে আব্দুস সত্তারের ছেলে আশিক, মিরার তিন ছেলে— জসীম, ওয়াসীম ও ইয়াছিন, বাচ্চুর ছেলে রাজ্জাক ও তৌকির।
এ ছাড়া বরিশাট মোল্লা পাড়ায় আওয়াল শেখের ছেলে ফরিদ ও সেলিম, বটতলা এলাকায় হেলাল শেখের ছেলে সিনবাদ ও আব্দুল্লাহ এবং দোকানদার নাসির ও তার ভাই বাবলুর নাম উঠে এসেছে। পূর্ব পাড়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় নারী সদস্য ববিতার স্বামী মিলন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ মাঝে মধ্যে দু-একজনকে ধরলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা ছাড়া পেয়ে যান। এর পেছনে আছে ‘অদৃশ্য প্রভাব’ ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। আগে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা এদের মদদ দিতেন, এখন বিএনপির নেতারাও জড়িয়ে গেছেন— এমনটাই বলছেন এলাকাবাসী।
তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইদ্রিস আলী বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন, পুলিশ সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এখানে যেহেতু সামাজিক কোন্দোল বেশি, সেহেতু মাদক ও বিকাশ প্রতারকদের দমনে একটু সময় কম পাই।
তিনি আরো বলেন, বরিশাট ও মহেশপুর অনেক আগে থেকেই বিকাশ প্রতারক ও মাদক কারবারিদের জন্য স্বর্গরাজ্য। থানায় এ সংক্রান্ত চারটি মামলা রজু আছে, আমরা তাদেরকে ধরার জোড় চেষ্টা চালাচ্ছি এবং আটককৃতদের দেওয়া তথ্যমতে এ চক্রের সাথে জড়িত বাকিদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
কেকে/এএম