বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: নির্বাচনি কার্যক্রম শুরুর আগেই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছি      শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা শুরু      বন্যা-ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় নিহত ৪৪      দুদকের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ      বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ      ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’      নির্বাচনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী : ইসি সচিব      
খোলাকাগজ স্পেশাল
জামায়াতের দ্বিচারিতা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফরপরবর্তী বক্তব্যগুলো ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। সেসব বক্তব্যে রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশল বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বার্তা দিতে দেখা গেছে তাকে। এ ছাড়া অতিসম্প্রতি দলটির ঢাকা দক্ষিণ শাখার একটি আয়োজনে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি নতুন করে বিতর্ক উসকে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। এমনকি দলটির ভেতরেও এ ঘটনায় দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

অনেকে মনে করছেন, জামায়াত নেতাদের মধ্যে একক কোনো রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর অনুপস্থিত। একই ইস্যুতে একাধিক ভাষ্য, ভিন্নমুখী বক্তব্য এবং পরস্পরবিরোধী কৌশল দলটির ভেতরে এক ধরনের বাহুল্য এবং সিদ্ধান্তহীনতার চিত্র তুলে ধরছে। এতে দলটির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এর ফলে মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে তৈরি হচ্ছে দ্বিধা ও বিভ্রান্তি। তাদের ভাষ্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতা এবং অপরিপক্ব কৌশল দলকে বিতর্কে ফেলছে। বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতায় যখন পরিকল্পিত ও দৃঢ় নেতৃত্ব জরুরি, তখন জামায়াতের ভেতর চলছে স্পষ্ট হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর নির্বাচন প্রশ্নে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মতভিন্নতা দেখা দেয়। বিএনপি যেখানে প্রথম থেকেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে বলে আসছিল, তখন জামায়াত সেটার বিরোধিতা করে রাষ্ট্র সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার শেষে নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দিচ্ছিল। ফলে রাজনীতির মাঠে এ দুই পুরোনো মিত্রের সম্পর্ক শত্রুতার পর্যায়ে নেমে আসার উপক্রম হয়। দুই দলের শীর্ষ নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এ সময় একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও কথা বলতে ছাড় দেননি বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী বিএনপি নেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন জামায়াত নেতারা।

এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর শেষে লন্ডনে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং সিনিয়র নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকপরবর্তী দেশে ফিরেই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে ভিন্ন সুর শোনে দেশবাসী। জামায়াত আমির তার নির্বাচন ইস্যুতে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন রমজানের আগেই শেষ হয়ে যাক। ওই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা, কখনো বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার ইলেকশনটা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাবে। তাই আমরা চাচ্ছি, ওই আশঙ্কার আগেই অর্থাৎ রমজানের আগেই এইটা (সংসদ নির্বাচন) হয়ে যায়, সেটা আমাদের মতামত।’ 

তখন জামায়াত আমিরের এ বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কৌতূহলের জন্ম দেয়। অনেকেই বলেন, ‘হঠাৎ এমন কী হলো যে, একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল জামায়াত? 

অপরদিকে নির্বাচনি ইস্যুতে পারস্পরিক বক্তব্য প্রসঙ্গে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের আমির যেটা বলেছেন, সেটা হলো প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে ইলেকশনের কথা বলেছেন। তার কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন কি না তা আমরা দেখতে চাই। তবে, এটা রমজানের আগেই শেষ হলে ভালো হয়। কারণ, জুনে বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, ছাত্রদের পরীক্ষা থাকবে। তখন আবার ইলেকশন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাবে। তাই রমজানের আগেই নির্বাচনটা হয়ে গেলে ভালো হয়। কিন্তু, মিডিয়া পুরো বক্তব্য না দিয়ে কেবল ‘রোজার আগেই নির্বাচন চাই’ বলে চালিয়ে দিয়েছে। এটা ঠিক করেনি। তার পুরো বক্তব্যটা ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা উচিত ছিল।’

এর মধ্যেই গতকাল শুক্রবার সবকিছু ছাড়িয়ে ফিরলেন পুরোনো দাবিতে। জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি জানিয়েছেন আহ্বান। যেটা নতুন গঠিত শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি। 

জামায়াত আমির এ প্রসঙ্গে গতকাল ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, ‘একটা নির্বাচন কমিশন হয়েছে। তারা বলেছেন তারা নাকি ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দেবেন। আমরা তাদের একটি অ্যাসিড টেস্ট দেখতে চাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যেটা দিয়ে পাঁচ বছর দেশ শাসন হবে, সেই নির্বাচনের আগে জনগণ এখন সাফার করছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিধি না থাকার কারণে। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দিন। আমরা দেখি আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা কতটুকু। এটার প্রমাণ আপনারা পেশ করুন।’
 
অন্যদিকে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা মুখে মুখ খুলেন দলটির কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, প্রোগ্রামটি আমরা সাংবাদিকদের নিয়ে করিনি। বরং সেটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশ ছিল। সেখানে কালবেলা পত্রিকার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, তিনি একটা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এসেছিলেন। এখন আমি একটি সংগঠনের সম্পাদককে বাদ দিয়ে তো শুধু সভাপতিকে দাওয়াত দিতে পারি না। আমরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নেতাদের নিয়ে বসেছিলাম। সেই জায়গায় অন্য বিষয়গুলো সেদিন অপ্রাসঙ্গিক ছিল।

এদিকে জামায়াতের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন দলটির সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে মোহাম্মদ নাদিমুর রহমান। শুধু তাই নয়, মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পেয়ে যেন জামায়াতের হাল ধরেন এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। 

জামায়াতে সমালোচনা করে গত বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজামীপুত্র লেখেন, কথাগুলো শতভাগ সত্য এবং যৌক্তিক।  আর জামায়াতের নীতি-আদর্শ থাকবেই বা কী করে? জামায়াতের যেই ছয় নেতার অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের এ ফাঁসি ঠেকাতে পারলেই না জামায়াতের নীতি-আদর্শ ঠিক থাকত। উলটো ছোটজন বলেছিলেন ‘তারা এখন জেলখানায় আরাম করুক আর আমরা এখন একটু খাই’। আর বড়টা তো পরে মুখ ফসকে বলেই ফেলেছিলেন ‘তারা জেলখানায় পচে মরুক, আমরা আমাদের সংগঠন গোছাব, না হলে আমাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বানিয়ে দেবে।’ পরবর্তী সময়ে তো আবার আরেকটা সলিমুদ্দীন না কলিমুদ্দীন কি নাম, এক বক্তৃতায় তো বললেনই ‘আমরা যদি আইন না মানতাম তাহলে আপনারা আমাদের একটা নেতাকেও ফাঁসি দিতে পারতেন না’। 

তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কথা বলে কে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায় এটা পুরো ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। এখন আবার শুরু করেছে সকালে এক কথা আর রাতে আরেক কথা বলা। আবার অন্যদিকে এক নেতার এক কথা আবার আরেক নেতার আরেক কথা। অর্থাৎ কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। তাই তো দোয়া করি এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেব দ্রুত মুক্তি পেয়ে শহিদের এ রক্তভেজা সংগঠনটির (জামায়াত) হাল ধরুক। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে নেক হায়াত এবং সুস্থতা দান করুন আমিন...’।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  জামায়াত   দ্বিচারিতা   রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট   ধর্মভিত্তিক রাজনীতি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নির্বাচনি কার্যক্রম শুরুর আগেই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছি
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জীবন্ত প্রতীক
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বেনাপোলে প্রথম হাসপাতাল নির্মাণ করবে : তৃপ্তি
গঙ্গাচড়ায় ধান মাড়াই মেশিনের আগুনে ক্ষয়ক্ষতি
সুন্দরগঞ্জে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে স্প্রে মেশিন বিতরণ

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল
চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা রয়েছে: তানভীর হুদা
নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১২.৫ ডিগ্রি
সোনাইমুড়ীতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close