সোমবার, ৯ জুন ২০২৫,
২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

সোমবার, ৯ জুন ২০২৫
শিরোনাম: দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ      ড. ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক      ঈদ ফিরতি যাত্রায় মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের      ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও চলছে পশু কুরবানি      ‘প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রাজনৈতিক দল ও জনগনের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে’      ঈদের দিন কুরবানি করতে গিয়ে আহত দুই শতাধিক      যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
রাজন হত্যা মামলার তদন্তে পিবিআই
ফাঁসছেন ক্রসফায়ারের রাজা কুখ্যাত সেই ওসি ‘আশিক’
শাহ মোহাম্মদ রনি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৪৩ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

অবশেষে ফেঁসেই গেলেন ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের একসময়ের ত্রাস আলোচিত ১২ ক্রসফায়ারের সেই ওসি মো. আশিকুর রহমান (৮০০৩১২১৯০২)। ক্রসফায়ারের নামে রাজন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এর পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশের কতিপয় সদস্য। 

বুধবার  আদালতের আদেশ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হক অভিযোগ তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। 

পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার রাতে দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘আদালতের আদেশ পেয়ে মামলার আবেদন তদন্তের জন্য পরিদর্শক মো. মোসলেহ উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব পুলিশ সদস্য এই ঘটনায় জড়িত তারা ছাড় পাবেন না। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

জানা যায়, আলোচিত মামলার বাদী নগরীর পুরোহিতপাড়ার হারুন অর রশিদ। তিনি ২০১৮ সালের ২৪ মে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ডিবির ক্রসফায়ারে নিহত রাজন মিয়ার (২৫) বাবা। গত বছরের ২০ অক্টোবর তিনি ওসি মো. আশিকুর রহমানসহ ১৭ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একেএম রওশন জাহানের আদালতে মামলার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজন হত্যা সম্পর্কে কোনো মামলা হয়েছিল কি-না এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। ক্রসফায়ার বা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দেয়।

মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২২ মে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ডিবির ওসি মো. আশিকুর রহমানের উপস্থিতিতে অন্য আসামিরা পুরোহিতপাড়ার বাসা থেকে ঘুমিয়ে থাকা রাজনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বাবা হারুন ও পরিবারের সদস্যরা দুই দিন ডিবি অফিসে ধরনা দিলেও রাজনকে ছাড়া হয়নি। ওসি আশিক হারুনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তারা চাহিদামত টাকা না দেওয়ায় পরবর্তীতে ২৪ মে ২০১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বাসার পাশে রেলওয়ের প্রাচীরের কাছে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ডেকে তাদের সামনেই বুক ও পেটে গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে টগবগে যুবক রাজনকে হত্যা করা হয়। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে দ্রুত দাফনের তাগাদা দিয়ে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে ওসি আশিক। 

নিহত রাজনের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, ওসি আশিক নিজেই রাজনের বুকে গুলি চালান। ক্রসফায়ারে শর্টগান ব্যবহারের পাশাপাশি সংগ্রহ করা দুটি কাটা বন্দুক ব্যবহার করতেন ওসি আশিক। খুব কাছ থেকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করতেন তিনি, এক এসআই ও দুই কনস্টেবল।

সূত্র জানায়, মো. আশিকুর রহমান ২০১৭ সালের ৫ জুলাই ময়মনসিংহ ডিবির দায়িত্ব নেন। ওসি ইমারত হোসেন গাজীকে সরিয়ে আশিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইমারতকে কৌশলে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছিল। রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি এবং এসপি সৈয়দ নূরুল ইসলামের আশির্বাদে আশিক ময়মনসিংহের মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। দুই কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে মত্ত থাকেন টাকার নেশায়। মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলের নামে শুরু করেন ক্রসফায়ার। 

শুরুতে ৫-৬ জন মাদক কারবারিকে ক্রসফায়ার দিয়ে আশিক প্রশংসায় ভাসেন। পরে শুরু করেন ‘ফরমায়েশি ক্রসফায়ার’। প্রতি ক্রসফায়ারে গড়ে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ‘ধুরন্ধর’ আশিক। ছেড়ে দেওয়ার নাম করে ক্রসফায়ারের শিকারদের পরিবারের কাছ থেকে নগদ টাকা ও সোনার গহনা আদায় করেন। সূত্রমতে, কয়েকজনের কাছ থেকে অর্ধকোটির বেশি টাকা নেন তিনি। এদের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৬ জুন শনিবার মধ্যরাতে সানকিপাড়ার রেহানা আক্তার (৪০), একই বছরের ১ জুলাই সোমবার মধ্যরাতে শম্ভুগঞ্জের ভেবেল বাচ্চু (৪৭) এবং ১৫ জুলাই রোববার মধ্যরাতে সানকিপাড়া সেনবাড়ির খান নোমান (৪৮) অন্যতম। ওসি আশিক ৬ মাসের ব্যবধানে ময়মনসিংহ নগরীতে ১২টির বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটান।

আলোচিত মামলায় অন্যদের মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান (৭৩৯১০৬২৬০৫), এসআই ফারুক আহমেদ (৭১৯৭০৩৫০৬৫), পরিমল চন্দ্র দাস (৭৯০০০৩০৭৬৬) ও আক্রাম হোসেন (৭৯০০০৩০৭৬৬), এএসআই আব্দুল মজিদ-২, জিন্নাত হাসান মানিক, জাকির হোসেন ও জিল্লুর রহমান, কনস্টেবল কাউসার হাবিব, গোলজার হোসেন, সোহরাব আলী, সাইদুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, রাশেদুল হাসান, সানোয়ার হোসেন ও জহিরুল ইসলামকে আসামি করা হয়। এদের কয়েকজন ময়মনসিংহে কর্মরত থাকলেও অনেকেই বিভিন্ন জেলায় বদলি হয়েছেন। প্রধান আসামি ওসি মো. আশিকুর রহমান বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত।

জানা যায়, ওসি আশিক ৬ মাসে ‘ফরমায়েশি ক্রসফায়ার’ সম্পন্ন করেন। তখন সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান চলছিল। ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে নিজের আখের গোছানোর জন্য তিনি ক্রসফায়ার সংঘটিত করেন। মাদক কারবারিদের কাছ থেকে বিপুল মাদক উদ্ধার করলেও চিহ্নিত পুলিশ দিয়ে অন্য মাদক কারবারির কাছে বিক্রি করাতেন। 

ক্রসফায়ার আশিককে আলাদীনের চেরাগ পাইয়ে দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে এক বছরে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এক বছর ১৪ দিন ডিবিতে কর্মরত থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বদলি হয়ে একই জেলার গৌরীপুর থানায় যান। সেখানে এক মাস ২৪ দিন পর তদবির করে অন্য রেঞ্জে চলে যান। সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ ডিবিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় কর্মরত থেকে ওসি আশিক নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে নামে-বেনামে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।

সূত্র আরো জানায়, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দঘাট থানায় পোস্টিং হন ওসি আশিক। সেখানে শুরু করেন ‘নতুন ধান্দা’। দাড়ি রেখে মুসুল্লি সেজে ঐতিহ্যবাহী যৌনপল্লি দৌলতদিয়ার ‘দরবেশ’ সাজেন। মিডিয়ায় প্রচার করাতে থাকেন পজেটিভ কর্মকাণ্ড। ঘাট থেকে সর্বত্র শুরু করেন ব্যাপক চাঁদাবাজি। ঘাটে বিভিন্ন্ন পণ্য ও গরুবাহী ট্রাকে সর্বহারা দিয়ে চাঁদা তোলাতেন। এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ওপর মহলে অভিযোগ করলে কর্তৃপক্ষ তাকে বদলি করে। বদলি ঠেকাতে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও যৌনকর্মীদের দিয়ে মানববন্ধন করান ওসি আশিক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, জনগণের তোপের মুখে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অন্যত্র যেতে বাধ্য হন এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ওসি আশিক ঢাকার দক্ষিণখান থানায় কর্মরত থেকে সরাসরি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর পাশাপাশি অনেক ঘটনার জন্ম দেন।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  রাজন হত্যা মামলা   তদন্ত   পিবিআই   ক্রসফায়ার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ
বাঞ্ছারামপুরে নদী ভাঙ্গন রোধে মানববন্ধন
আ.লীগের আমলে দেশের মানুষকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে : ডা. শফিকুর রহমান
তুচ্ছ ঘটনার জেরে কিশোরকে কুপিয়ে জখম, থানায় অভিযোগ
আবারো করোনায় আক্রান্ত নেইমার

সর্বাধিক পঠিত

ঈদ করা হলো না বউ-শাশুড়ীর, ফেরীতে উঠতে গিয়ে মারা গেলেন দুজনেই
বাঞ্ছারামপুরে কুরবানি মাংস বেচাকেনার হাট
ফুলবাড়িতে গাঁজাসহ আটক ২
মৌলভীবাজারে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ভাইসহ ৪ জনের মৃত্যু
তাড়াশে কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close