নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আবিরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষককে মারধর করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। এ সময় প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়াকে রক্ষা করতে আসা স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের ওপরও হামলা করা হয়। হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- সুজন, ছাব্বির, রাবেয়া, রোকসানাসহ আরো অনেকে। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে আনুমানিক ১২টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের উপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের আবিরপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনে এ প্রতিবাদ মিছিল করেন।
একই সাথে বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা বর্জন করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য কয়েক দফা সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যানিকেতন বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক মাহফজুর রহমান ভূঁইয়া খোলা কাগজকে বলেন, কয়েক দিন ধরে আমার বিরুদ্ধে এলাকার কিছু লোক নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে বলে নানা রকম হুমকি দিচ্ছিল। আজ আমি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে মাসুমের নেতৃতে শতাধিক প্রাক্তন ছাত্র ও এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে আমাকে মারধর করে, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোর করে লিখিত পদত্যাগ পত্রে এবং দুইটি সাদা কাগজে সই আদায় করে নেয়।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, ঘটনাটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির রুহুল আমীনসহ কয়েকজন শিক্ষকের ইন্ধনে ওই হামলা ও পদত্যাগপত্র নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি সোনাইমুড়ি থানায় এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে ঘটনা অবহিত করেন। কিন্তু তারা কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকের হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষকে মারধর করে স্বাক্ষর নেয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরিক্ষা বর্জন করে।
জানতে চাইলে সোনাইমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদ আলম বলেন, প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে পদত্যাগ পত্রে সই নেওয়ার ঘটনাটি শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। তবে প্রধান শিক্ষক এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার খোলা কাগজকে বলেন, দুপুরের দিকে একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন করে প্রধান শিক্ষক হামলার কথা জানিয়ে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই আদায় করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। প্রধান শিক্ষক এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউএনও আরো জানান, মঙ্গলবার একদল লোক তার দপ্তরে এসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত একটি অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তাদের বলেছেন।
সোনাইমুড়ি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষককে মারধর করে প্রদত্যাগপত্র স্বাক্ষর নিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাইমুড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক কামাল বলেন, তারা ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের কেউ যদি ওই ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপর দিকে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. হানিফ মোল্লা বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে জামায়াতের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। এটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের বিষয়। এখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জামায়াতের নাম জড়ানো হচ্ছে।
কেকে/এজে