ভোলার চরফ্যাশনে ভূ-গর্ভস্থে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পৌর সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র গভীর নলকূপগুলোতে পানি না উঠায় অকেজো হয়ে পরায় বাসা বাড়িতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পনির সংকট। পাশাপাশি গভীর নলকূপ নির্ভরশীল সেচ পাম্পগুলোতে চাহিদা মতো পানি মিলায় ব্যস্তে যাচ্ছে বোরোর আবাদ। সুপেয়পানির সংকটে শহরের বাড়ি ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন পৌরসদরের বাসিন্দারা। তবে গ্রামে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। পুকুরের পানিতে ময়লা থাকায় ওই পানি ব্যবহারে দেখা দিয়েছে নানা রোগ। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে শিশু কিশোররা। অপরিকল্পিত ভাবে খাল-পুকুর-জলাশয় ভরাট করার ফলে এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারনা সুশিল সমাজের।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়নে সরকারি উদ্যোগে ১০ হাজার ৭৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানায় উপজেলায় রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক গভীর নলকূপ। যার মধ্যে সরকারী অর্থয়ানে নির্মিত প্রায় ২ হাজার ৫০০ নলকূপ অকেজো আছে। এ সবের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে ৪০ হাজারের বেশী নলকূপের পানি উঠছেনা। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় অর্ধলক্ষ গভীর নলকূপে মিলছে না পানি। এতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপশি গভীর নলকূপ নির্ভর সেচ প্রকল্পেও মিলছেনা পানি। তবে ভারী বৃষ্টিপাত শুরুর আগে এই সংকটের কোন সমাধান আছে বলে মনে হয় না।
চরফ্যাশন পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহিদা জানান, কয়েকমাস যাবত গভীর নলকূপের বাসাবাড়িতে মটোর সংযুক্ত পানি উঠছেনা। এতে সুপেয় পানির সংকটরে কারনে পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। পৌর সদরে পুকুর গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নেই পুকুরে পানি। এতে আরো সংকট দেখা দিয়েছে পুকুর না থাকায়। পৌর সভার বাসিন্দাদের জন্য পৌরসভা থেকে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকালেও নেই কোন পানির সংযোগ। তাই পৌরসভার অনেক গ্রামেরই বিশুদ্ধ পানির সংকটে বিপাকে আছে বাসিন্ধারা।
ভুক্তভোগী জয়নব বিবি বলেন, নলকূপে পানি উঠছে না। আমরা পানি সংকটে আছি। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সমস্যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ফলে আমরা আশপাশের পুকুরের পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি। পুকুরের পানি বিশুদ্ধ না হওয়ায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে বৃদ্ধসহ শিশু কিশোরা।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এখানে অধিক সংখ্যক নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। কিছু কিছু নলকূপে বছরের পর বছর অস্বাভাবিক ভাবে নিজ থেকে পানি উঠেছিল। কর্তৃপক্ষ তখন এই সমস্যা আমলে নিলে আজকের পরিস্থিতি দেখতে হতো না।
জাহানপুর ইউনিয়নের ইরি বোরো প্রজেক্টের ম্যানেজার সাজাহান জানান, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। এতে পানির জন্য বোরো জমিতে সেচ দিতে না পেরে পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে গভীর নলকুপ দিয়ে সেচ কাজে ব্যবহৃারিত স্কীমের কৃষকরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, গভীর নলকূপগুলোতে পানি না উঠায় গোটা উপজেলা ব্যাপী বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ পুকুর জলাশয়ের জমাট পানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এতে করে শুষ্কমৌসুমে ডায়েরিয়া-আমাশয়ের মতো পানি বাহিত রোগ মহামারী আকারে ছড়াতে পারে বলে তিনি সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলায় বিএডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশল মো.আরিফ হোসেন জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চরফ্যাসনের উদ্যোগে এখানে ৪২টি সেচপাম্প চালু আছে এবং উপজেলা কৃষি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে এখানে ১ হাজার ৭১৮টি সেচ পাম্প চালু আছে। এসব পাম্প ব্যবহার করে খাল থেকে পানি তোলা হচ্ছে। কিন্ত কিছু সেচ পাম্পে গভীর নলকুপের সঙ্গে সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহারের কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। তা সত্ব্যেও কিছু কিছু সেচ প্রকল্পে সাব-মার্সিবল পাম্প ব্যবহার করে ভূ-গর্ভস্থ পানি তোলার কাজ চলছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
চরফ্যাশন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এখানে শুষ্কমৌসুমে ভূ-গর্ভ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। ফলে গভীর নলকূপগুলোতে শুষ্কমৌসুমে পানি উঠছে না। এ বছর এই সংকট প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে পৌর সদরের বেশীরভাগ বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত গভীর নলকূপ এবং সংযুক্ত মর্টারগুলোতে পানি উঠছে না। অপরিকল্পিত ভাবে খাল-পুকুর-জলাশয় ভরাট করার ফলে এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষামৌসুম আসার পর্যন্ত এ সংকট চলমান থাকবে বলেও এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
কেকে/এআর