ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পা দিয়ে বিমান চালিয়ে রেকর্ড

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১:১৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১

পা দিয়ে বিমান চালিয়ে রেকর্ড

হাত দুটি নেই। তাই বলে থেমে নেই জীবন। জীবনের সবকিছুই চলছে দুই পা দিয়েই। এমনকি বিমানও চালান পা দিয়ে। তিনিই হয়তো পৃথিবীর মধ্যে একজন। যিনি পা দিয়ে বিমান চালাতে পারদর্শী। জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ তিনি। দুই হাত ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছেন। জীবনে অনেক যুদ্ধ করে আত্মবিশ^াসের সাহায্যে লক্ষ্যে পৌঁছেছেন এই নারী। শুধু বিমানই নয় বরং কি-বোর্ড টাইপিং, পিয়ানো বাজানো, সাঁতার কাটা, ফোন ব্যবহার সবই পারেন তিনি। এমনকি পা দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত সব কাজই করেন তিনি।

নাম তার জেসিকা কক্স। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে জেসিকা নাচ ও শরীরচর্চা করা শুরু করেন। পাঁচ বছর বয়সে সাঁতার কাটতে শেখেন তিনি। ১০ বছর বয়স থেকে তায়োকান্দোও শিখতে শুরু করেন।

জীবনের কোনো কাজেই থেমে যাননি জেসিকা। সবকিছু করেছেন স্বাভাবিকভাবে। যা করতে চেয়েছেন, তাই করেছেন। বাবা-মায়ের পর এক সময় স্বামী আসেন জীবনে। স্বামীর নাম প্যাট্রিক। তিনি চতুর্থ ডিগ্রির ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত তায়োকান্দ প্রশিক্ষক। শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকের মনে একসময় ভালোবাসা জেগে ওঠে। এরপরই বিয়ে করে ফেলেন তারা। আমেরিকান তায়েকান্দো অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম আর্মলেস ব্ল্যাক বেল্টধারী নারী হলেন এই জেসিকা। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালে বিশ্বের প্রথম আর্মলেস লাইসেন্সধারী পাইলট হন তিনি। জেসিকা গিনেস বুকেও নাম লিখিয়েছেন তার এই প্রতিভার জন্য। এরপর টানা তিন বছর জেসিকা মোট ৮০ ঘণ্টা বিমান চালিয়েছেন।

জেসিকা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমার দক্ষতা প্রমাণ করতে তিনটি ভিন্ন রাজ্যে তিন বছর যাবৎ তিন জন প্রশিক্ষকের কাছে ৮০ ঘণ্টা বিমান চালিয়েছি। অবশেষে আমি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখাতে পেরেছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ৩৯ বছর বয়সী এ নারী পা দিয়ে বিমান চালাতে পারেন দারুণ দক্ষতার সঙ্গে। শুধু তাই নয়, গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে রান্না এমনকি ঘরও গুছিয়ে নেন জেসিকা। স্বামী প্যাট্রিকও ঘরের কাজে নিরলস সহায়তা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের টুসন শহরে বসবাস করেন এ দম্পতি। প্যাট্রিক তাদের সম্পর্কের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, অনেকেই হয়তো ভালো চোখে দেখেননি, আমি জেসিকার সঙ্গে প্রেম করেছি বা তাকে বিয়ে করেছি। তবে আমি জেসিকাকে তার আত্মবিশ্বাসের কারণে শ্রদ্ধা করি। আজীবন তার পাশে থাকার জন্যই তাকে বিয়ে করেছি।

২০১০ সালে তাদের প্রেম হয়। এর দুই বছর পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জেসিকা ও প্যাট্রিক। জেসিকা বলেন, প্যাট্রিক খুবই ভালো মানুষ। সে না থাকলে হয়তো আমি জীবনে এতদূর এগিয়ে যেতে পারতাম না। সব বিষয়েই সে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে, সঙ্গে থেকেছে। প্রিয়জনের কাছ থেকে এর চেয়ে আর বেশি কিছু চাই না। জেসিকা তার জীবনধারণের বিষয়ে বলেন, জীবনের পদে পদে শিখছি এখনো। একটি বয়স পর্যন্ত আমার মা দেখাশোনা করতেন। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে জামা-কাপড় পরা থেকে শুরু করে দাঁত ব্রাশ সবই শিখেছি।

এছাড়াও টয়লেট ব্যবহার, গোসল করা, ঘর গোছানো, ফোন ব্যবহার করাসহ নিজের কাজগুলো করতে শিখেছি। এমনও হয়েছে ড্রেসের বোতাম লাগাতে পারতাম না। নিজের কাপড় মেলে দিতে পারতাম না। এখন সবই আয়ত্তে এসেছে। জেসিকা পা দিয়েই মন ভোলানো সুর তোলেন পিয়ানোতে। গানও গাইতে পারেন। জেসিকা ও প্যাট্রিক অবসর পেলেই বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। পাশাপাশি তারা বিকলাঙ্গ মানুষদের কাউন্সিলিং করান। যাতে তারা নিজেদের বোঝা না ভেবে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমার মতো যাদের হাত নেই তাদের জন্য কাজ করছি। এমনকি আমার নিজের সন্তানও যদি হাত-পা ছাড়া জন্মগ্রহণ করে, তবুও আমি তাকে সাদরে গ্রহণ করব।

 

 
Electronic Paper