ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিরুত্তাপ বিপিএল

সাইদ রহমান
🕐 ১১:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০১৯

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘ক্রিকেট’ হলো জাতীয় আবেগের অন্য নাম। আশির দশকে ফুটবলের যে জনপ্রিয়তা বা উত্তেজনা ছিল বর্তমান ক্রিকেট সেটাকেও ছাপিয়ে গেছে নিঃসন্দেহে। প্রতিটি শিশুই এখন বড় হয়ে হতে চায় সাকিব, তামিম, মাশরাফি। দেশের ক্রিকেটের এই রমরমা সময়ে উত্তেজনার পারদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লীগের আগমন। আকাশচুম্বী উত্তেজনার ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ বিপিএলের প্রথম আসর বসে ২০১২ সালে। আয়োজনে কিছু ত্রুটি থাকলেও উত্তেজনার কমতি ছিল না গত পাঁচটি আসরে। গ্যালারিতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। মাঠের খেলার পাশাপাশি নানা আয়োজনে সমৃদ্ধ ছিল আসরগুলো। স্বাভাবিকভাবেই বিপিএলকে ঘিরে একটা উত্তাপ ছড়িয়ে যেত ক্রীড়াঙ্গনে।  

কিন্তু চলতি ষষ্ঠ আসরে হঠাৎ করেই নেমে এসেছে অনাকাক্সিক্ষত নিস্তব্ধতা। মাঠে দর্শক নেই বললেই চলে। একটা প্রতিযোগিতামূলক আসর হিসেবে যতটা আলোচনায় থাকার কথা, ততটা আলোচনাও নেই এবারের বিপিএল। আয়োজক কমিটির কপালে ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে এমন পরিস্থিতি। কোথায় কমতি, কোথায় খামতি- এমন প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে তাদের সবার মধ্যে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) এই টুর্নামেন্ট নিয়ে যতটা হম্বিতম্বি করে থাকে, এবার দর্শকদের মধ্যে ততটা সাড়া, উৎসুক মনোভাব কিংবা উন্মাদনার কিছুই নেই। তাই হতাশ বিসিবিও।
অথচ প্রযুক্তির সংযোজনে কোনো খামতি রাখেনি আয়োজক কমিটি। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডিআরএস, এলইডি স্ট্যাম্প, ড্রোন ও স্পাইডার ক্যামেরা। তারকারও কমতি নেই চলতি আসরে। এই প্রথমবার বিপিএলে খেলতে এসেছেন স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যালেক্স হেলসের মতো তারকারা। ১৫ জানুয়ারি সিলেট পর্বে যোগ দিচ্ছেন টি-২০’র মহাতারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স। এত কিছুর পরও কেন জমছে না বিপিএল? কেন খাঁ খাঁ করে গ্যালারি স্টেডিয়ামের গ্যালারি?
চারদিক থেকে ওঠা এ প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একসময়ের আইকন, সাবেক অধিনায়ক ও ম্যাচ রেফারিদের প্রধান রকিবুল হাসান খোলা কাগজকে বলেন, ‘দর্শকখরার পেছনে মোটা দাগে আমি তিনটি কারণ বলব- বিপিএলের আগে আগে টানা অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকায় দর্শকের তৃষ্ণা মিটে গেছে, টিকিটের চড়া দাম, খেলার সময়টাও দর্শকের মাঠে আসার অনুকূলে নয়।’
এর আগে একই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে চিটাগং ভাইকিংস দলপতি মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন, ‘ফাঁকা গ্যালারি তো থাকবে ভাই। আপনারা এখন মোবাইলে লাইভ দেখতে পারেন, বাসায় বসে বসে আরামে খেলা দেখতে পারেন। যখন বাইরে কাজ করেন তখন টিভিতে দেখেন বা মোবাইলে দেখেন। এ কারণেও হতে পারে। আগে আবাহনী-মোহামেডানের খেলা হতো, লিগের খেলা যদি দেখেন, সেখানে কোথাও দেখার সুযোগ থাকত না, এ কারণে তখন অনেক দর্শক হতো।’
মুশফিক আরও যোগ করেন, ‘আর সারা বছর আন্তর্জাতিক খেলা এত বেশি হয় যে, দর্শকরা হয়তো ভাবে, এখন একটু রেস্ট নেই, আন্তর্জাতিক খেলা হলে দেখব। আমি দর্শকদের উদ্দেশে এটাই বলব, এত বড় বড় প্লেয়ার আসছে- স্মিথ, ওয়ার্নার, রাসেল, পোলার্ড, তাদের খেলা যদি মাঠে বসে না দেখেন তাহলে আর কোথায় দেখবেন?’
রকিবুল কিংবা মুশফিক সম্পূর্ণ দায়টা দর্শকের ওপর ফেলতে চাইলে অনেক বোদ্ধারা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, বিপিএল খেলা উপভোগ করতে দর্শক যে মাঠমুখো হচ্ছে না, এর কারণ বহুবিধ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তেজনায় অনেকটা চাপা পড়ে ছিল বিপিএল। নির্বাচনের মাত্র পাঁচদিন পর শুরু হওয়ায় ঠিকমতো প্রচারণা পায়নি এবারের আসর। তা ছাড়া শুরু থেকেই দেখা গেছে নানা অব্যবস্থাপনা। টিভি সম্প্রচারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মাঠ থেকে সরাসরি প্রদর্শিত গ্রাফিকসে ভুল তো এখন নিত্যদিনের ঘটনা। শুরুর দিনে চিটাগং ভাইকিংসের ২৬ বছর বয়সী ডান হাতি পেস বোলার খালিদ আহমেদের নামের পাশে বয়স দেখাচ্ছিল ১১৯ বছর! এ নিয়ে বেশ হাস্যরস দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে বলছিলেন, এমন খেলা দেখার কোনো মানে হয় না।
বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়েও। ডিআরএস আছে অথচ ‘আল্ট্রাএজ’ বা স্নিকোমিটার নেই। কেউ কেউ রসিকতা করে এমনও বলছেন, এ যেন চিকিৎসক ছাড়া হাসপাতাল! মাঠের ক্রিকেটে অনেক সময় থার্ড আম্পায়ারকে কটবিহাইন্ড বা এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে স্লো মোশন অথবা শব্দ শুনে।
দর্শকখরা নিয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ সোহেল বলেন, ‘স্টেডিয়ামের দর্শকশূন্যতা দেখে হতাশ হওয়া যাবে না। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার মাত্র দুদিনের মধ্যে বিপিএল শুরু। আশা রাখি, শিগগিরই দর্শকে পরিপূর্ণ হবে গ্যালারি।’
অতীতে দর্শক টানতে নানা রকম চটকদার অফার দিতে দেখা যেত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে। কিন্তু এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। তাদের ফ্যান ক্লাবগুলোর তেমন তৎপরতা নেই মাঠে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে। এটাকেও দর্শকশূন্যতার একটা কারণ হিসেবে দেখেন অনেকে। এ ছাড়া আগে মাঠে দর্শক টানতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিজেরাই টিকিট কিনে দর্শক আনত। এবার সে উদ্যোগও দেখা যায়নি। এ বিষয়ে রংপুর রাইডার্সের সিইও ইশতিয়াক সাদিক বলেন, ‘দর্শকদের জন্য এবার আমরা সত্যিই তেমন কিছু করতে পারছি না। তবে খুব শিগগিরই দলের খেলা দেখতে রংপুর রাইডার্সের দর্শকদের জন্য নানা রকম লোভনীয় আয়োজন করব। সিলেট ও চট্টগ্রামে আমরা ফ্যান ক্লাবগুলোর তৎপরতা বাড়াব।’
সময়সূচিকে দর্শকখরার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিসিবি পরিচালক ও ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টা ও বিকাল ৫টার পর সময়গুলো স্কুল-কলেজ খোলা ও কোচিং থাকে। এ সময়টা অফিস-আদালত ছুটির সময়। তবে এখন যেহেতু সময় কিছুটা পেছানো হয়েছে, আশা করছি দর্শক বাড়বে।’ উল্লেখ্য, আজ থেকে প্রথম ম্যাচ দুপুর সাড়ে ১২টার পরিবর্তে শুরু হবে বেলা দেড়টায়। দ্বিতীয় ম্যাচ বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
এদিকে দর্শক কম হওয়ার জন্য টিকিটের চড়া মূল্যকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। তা ছাড়া টিকিট কোথায় পাওয়া যাচ্ছে তার কোনো সঠিক নির্দেশনা নেই। এমনকি এবার অনলাইনের টিকিট প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই। এসবেরর প্রভাব পড়ছে গ্যালারিতে।

 
Electronic Paper