দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও বিএনপির ভাবনা
মো.নিজাম উদ্দিন
🕐 ৪:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
![দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও বিএনপির ভাবনা](http://www.kholakagojbd.com/upload/2022/november/Untitled-1_1.jpg)
এক
সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত উভয় ব্যবস্থাতেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বর্তমানে শাসনব্যবস্থার একটি মৌলিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমেরিকা, ইউকে,রাশিয়া, কানাডা, ভারত,পাকিস্তান সহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের পার্লামেন্টই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট।বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির ভিশন -২০৩০ তে ই প্রথম উল্লেখ করে ছিলেন বিএনপি ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করবে।অর্থাৎ পার্লামেন্টের একটি উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে।যেখানে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এক্সপার্ট মানুষদের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে নির্বাচিত করা হবে।
যেমন -বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে অনেক সিনিয়র আইনজীবী রয়েছেন।যারা আইন অঙ্গনে অনেক খ্যাতিমান পন্ডিত মানুষ তারা এবং এমনিভাবে বিজ্ঞানী,শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, শিল্পী, ক্রিড়াবিদ, প্রযুক্তিবিদ সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার দক্ষ মানুষ রয়েছেন।পার্লামেন্টে উচ্চ কক্ষে এইসব বিজ্ঞ ও পন্ডিত মানুষদের জ্ঞান কাজে লাগানো যেতেই পারে।বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক ভাবে বিভক্ত সমাজে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবী।দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা হলে জাতির ক্রান্তিকালে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের সদস্যরা অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারবেন।নিজ নিজ ক্ষেত্রে এইসব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষের জ্ঞান আইনপ্রণয়নের কাজে লাগাতে পারলে নিশ্চয়ই দেশ এগিয়ে যাবে।
দুই.
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংকট চলছে দেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট থাকলে উচ্চ কক্ষের সদস্যরা হয়তোবা জাতির বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারতেন।আর না পারলেও রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য মানুষের ভরসার একটি জায়গা হতো।এ বিষয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতেই পারে। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বাংলাদেশে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট এখন সময়ের দাবী।দরুন -অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস,রেহমান সোবহান,অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,আলী রীয়াজ, শাহদীন মালিক,সাংবাদিক নুরুল কবির, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ কিংবা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতো মানুষেরা বাংলাদেশের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য!একবার চিন্তা করে দেখুনতো সেই পার্লামেন্টর কেমন হবে?
পার্লামেন্টের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে নতুন আইন প্রণয়ন করা, পুরনো আইন সময়োপযোগী করা এবং সংবিধান সংশোধনী সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা।একজন এমপিকে অবশ্যই একাডেমিক্যালি উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন আছে।ব্যতিক্রম যে নেই তাও নয়।বাংলাদেশের পার্লামেন্ট এখন ব্যবসায়িদের দখলে।টাকা থাকলেই এখন নমিনেশন পাওয়া যায়।আর ক্ষমতাশীন দলের নমিনেশন পাওয়া মানে এমপি নিশ্চিত।এখানে একজন এমপি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে তার টাকা পয়সা,মাসেল্স পাওয়ারের গুরুত্ব দেয়া হয় অনেক বেশি।ফলে পার্লামেন্টের মত জায়গায় যোগ্য মানুষের প্রবেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।এবং চাইলেই এই অবস্থার পরিবর্তনও সম্ভব নয়।শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে একজন নেতার পলিটিকাল ক্যাপাসিটি নির্ণয় করতে যাওয়া ও সব সময় সঠিক নয়।তবে অস্বীকারের সুযোগও নেই।
তিন.
জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সেই নেতা এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কিছু দুঃখ জনক বাস্তবতাতো রয়েছেই।যেহেতু একজন এমপির বানানো আইন অনুযায়ী একজন বিচারক রায় ঘোষণা করে সেখানে একজন নির্বাচিত এমপিকে আইন সম্পর্কে যথেষ্ট জানাশোনারও প্রয়োজন রয়েছে।কিন্তু নির্বাচনের রাজনীতিতে ভোটাররা প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতাকে অনেক সময় সেভাবে মূল্যায়ন করে না।তাহলে আইন প্রণয়নে কীভাবে একটা চেক এন্ড ব্যালেন্সড তৈরি করা যায়?বিকল্প কী হতে পারে? এজন্যই প্রয়োজন পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। নিম্ন কক্ষে ভোটের মাধ্যমে যারাই এমপি নির্বাচিত হোক না কেন উচ্চ কক্ষে রাষ্ট্রের অভিজ্ঞ মানুষদের নিয়োগ করলে আইন প্রণয়নে এমপিদের যোগ্যতার সীমাবদ্ধতার একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে।বাংলাদেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ মনে করা হলেও এখানে দ্বি দলীয় জোটের আড়ালে আসলে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট থাকলে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ও নিম্ন কক্ষে সরকারি দল ও বিরোধী দলের একটা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে যা শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।
বিএনপি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা খুব জোরে সুরে বলছে।এটা করা গেলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পার্লামেন্ট আরও বেশি শক্তিশালী হবে।আইন প্রনয়ণ সংশোধন এবং সংবিধান সংশোধনের মতো কাজে স্বেচ্ছাচারিতা কমবে।বিএনপির দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ভাবনায় বর্তমান পার্লামেন্ট অক্ষুণ্ণই থাকবে।বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।মেরামত করা খুব জরুরী।বিএনপি বাংলাদেশের কিছু সাংবিধানিক প্রাতিষ্ঠানের সংস্কার এবং মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে চায় যা সুশাসন এবং জবাব দিহিতাকে নিশ্চিত করবে।দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট হবে বিএনপির অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ।পার্লামেন্টকে সত্যিকারের `হাউজ অব দি ন্যাশনে' পরিনত করতে বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার বিএনপির ভাবনা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
![](http://www.kholakagojbd.com/images/archive-image.jpg)