ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সংস্কার হয়নি দত্তবাড়ি

২২ জানুয়ারি মধুমেলা

সিদ্দিকুর রহমান, কেশবপুর (যশোর)
🕐 ৮:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২০

আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে কপোতাক্ষ তীরে বসবে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা ও মধু জন্মোৎসব। বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবক্তা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ির দত্তবাড়ির প্রাচীন নিদর্শনগুলো দীর্ঘ ২০ বছরেও সংস্কার হয়নি। ১৯৯৮ সালে পুনঃসংস্কার কাজ শুরু হলেও ২০০১ সালে কাজ শেষ হয়।

এরপর আর সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিনেও দত্তবাড়ি, মন্দিরসহ প্রাচীন নিদর্শনগুলো পুনঃসংস্কার না হওয়ায় এর জানালা, দরজা ভেঙে যাচ্ছে। ছাদেও ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত আসবাবপত্রগুলো।

অতিথিদের বিশ্রামের জন্যে নির্মিত ডাক বাংলোটি এক যুগ আগে ভেঙে ফেলা হলেও তা দীর্ঘদিনেও নির্মাণ করা হয়নি। অথচ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে বরাদ্দকৃত এক কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পাদন না হওয়ায় সেটা ফেরত গেছে। মধুপল্লী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ভক্তদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবন যতটা না বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল যাতনায় ভরা। তিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হেনরিয়েটাকে বিয়ে করে বাবা চক্ষুশূল হয়ে যান।

হেনরিয়েটাকে কলকাতা থেকে তিনি বজরায় করে নিয়ে আসেন সাগরদাঁড়িতে। কিন্তু দাম্ভিক বাবা রাজনারায়ণ দত্ত পুত্র এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ওঠানো তো দূরের কথা পায়ে হাত দিয়ে আর্শীবাদ পর্যন্ত নিতে দেননি। বাংলা ভাষায় সনেট রচয়িতা এ কবি ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান।

মধুকবির জমিদার বাড়িটি চার একর ৩৩ শতক জমির ওপর অবস্থিত। ১৮৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার কবি ভক্তদের থাকার জন্যে চার শয্যা বিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউজ বানিয়েছিল। এ রেস্ট হাউজের একটি রুমেই পাঠাগার বানানো হয়। ১৯৬৬ সালে কবির বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে সরকার ন্যস্ত করে। কবির জন্মস্থান খ্যাত ঘরটি এখন আর নেই। কবির বাড়ি সংলগ্ন আবক্ষ মূর্তিটি কলকাতার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করে দেয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জমিদার বাড়ি, পুকুর পুনঃসংস্কারসহ পুরো এলাকাটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলে।

যে বজরায় কপোতাক্ষ নদীর কূলে কবি সস্ত্রীক সাত দিন অবস্থান করেছিলেন, সেখানে একটি পাথরে খোদাই করে লেখা আছে ‘শতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’। এ জায়গাটি বিদায় ঘাট নামে খ্যাত। ১৯৯৮ সালে এর পুনঃসংস্কার কাজ শুরু হয়।

২০০১ সালে কাজ শেষ হয়। এরপর আর সংস্কার হয়নি। দীর্ঘদিনেও দত্তবাড়ি, মন্দিরসহ প্রাচীন নিদর্শনগুলো পুনঃসংস্কার না হওয়ায় এর জানালা, দরজা ভেঙে যাচ্ছে। ছাদেও ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত আসবাবপত্রগুলো। মধুমেলায় আগত ভিআইপদের বিশ্রামের জন্যে নির্মিত ডাকবাংলোটি ২০০৬ সালে ভেঙে ফেলা হলেও আজও তা নির্মাণ করা হয়নি।

২০১৮ সালে উন্নয়ন কাজের জন্যে এক কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ টাকায় মহাকবির আধুনিক ভাস্কর্য, সমাধিলিপি প্রতিস্থাপন, অনশনস্থলে কাঠ বাদাম গাছের শ্রীবৃদ্ধি, বিখ্যাত কবিতা অবলম্বনে টেরাকোটা দিয়ে কাহিনী চিত্র ওয়াল ও ওয়াশ ব্লক নির্মাণের জন্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সমুদয় অর্থই ফেরত যায়। উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয় মধুপল্লী।

সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় চাই আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, মধুকবির জন্ম সাগরদাঁড়িতে হলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ফ্রান্স ও ভারতে। তাই তিনি শুধু বাংলাদেশের কবি নয়। আন্তর্জাতিকভাবে তাকে তুলে ধরার জন্যে সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

দত্তবাড়ির দায়িত্বে থাকা কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম জানান, মধুমেলায় প্রতি বছর ৮০ থেকে ৯০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে থাকে। এতে বছরে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়। নানা সমস্যার কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে আগ্রহী হয় না। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। তবে মধুপল্লীতে ইতোমধ্যে ছাদ বাগান ও পাখির বাসা স্থাপন করা হয়েছে।

 
Electronic Paper