ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খুলনার উপকূলে ভাঙন আতঙ্ক

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা
🕐 ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০১৯

মধ্য আষাঢ়ের কাক্সিক্ষত বৃষ্টি ব্যুমেরাং হয়েছে উপকূলবাসীর। বৃষ্টির মাস আষাঢ় কাঠফাটা চৈত্রের ছদ্মবেশে দক্ষিণাঞ্চলকে পুড়াচ্ছিল এতদিন ধরে। তীব্র সে তাপমাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে গত কয়েকদিন যাবৎ বৃষ্টি নামছে খুলনায়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু সে স্বস্তি যেন এখন অভিশাপ উপকূলবাসীর জন্য। দুর্বল বাঁধ বৃষ্টির পানিতে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাতের ঘুম আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে উপকূলবাসীর জন্য। যে কোনো মুহূর্তে খুলনাঞ্চলীয় উপকূলের বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গ্রামের পর গ্রাম।

স্থানীয়রা জানান, অধিকাংশ বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। ঘুমের মধ্যেও তারা আঁতকে ওঠেন, এই বুঝি বাঁধ ভেঙে গেল। বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। যে কোনো সময় জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। আর সেই আশঙ্কা নিয়েই চলতি দুর্যোগ মৌসুমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাট উপকূলের লাখ লাখ মানুষ।

উপকূলবাসী অভিযোগ করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার পর তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। এর আগে তারা কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয় না।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাকনা, হরিষখালী, কোলা, শ্রীপুর, মনিপুর, খাজরা বাজার ও গদাইপুর পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভাঙন ধরেছে খোলপেটুয়া নদীর কাঁকড়া বুনিয়া, থানাঘাটা, নছিমাবাদ, জেলেখালী দয়ারঘাট, বলাবাড়িয়া, বিছট ও কাকবাসিয়া পয়েন্টে।

শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার বেশি নাজুক নাপিতখালী, গাগড়ামারি, লেবুবুনিয়া, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা, কামালকাটি, চাউলখোলা, চন্দ্রদ্বীপ ও পাতাখালী পয়েন্টে খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া একই উপজেলার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে রমজানগর ইউনিয়নের মাদারনদীর শেখ বাড়ি মসজিদ ও চৌকিদার পাড়া এবং কালিন্দি নদীর পশ্চিম কৈখালীর মানুষ। দুর্গাবাটি ও পোড়াকাটলায় খোলপেটুয়া নদীর এবং দাতিনাখালীতে চুনা নদীর বেড়িবাঁধে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়ি কাউনিয়া, চাকলা, হরিশখালি, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে। এ বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে তার ইউনিয়ন আগেও চারবার প্লাবিত হয়েছে।

বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, একবার বাঁধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। ইউনিয়নের অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

শ্যামনগরের আইলা দুর্গত পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এম আতাউর রহমান জানান, ইউনিয়নের চারদিক কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত। ৭ থেকে ১নং পোল্ডারের আওতায় ইউনিয়নের অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

 
Electronic Paper