ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করা রিপনের লাশ দেশে ফিরলো

এ. আর. ডাবলু, জীবনননগর (চুয়াডাঙ্গা)
🕐 ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৪, ২০২৪

প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করা রিপনের লাশ দেশে ফিরলো

অবশেষে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর তিন মাস পর দেশে ফিরেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামের সৌদি প্রবাসী যুবক রিপন হোসেনের মরাদেহ।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় রিয়াদ থেকে ছেড়ে আসা শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি ট্রানজিট (রিয়াদ-কলম্বো-ঢাকা) কার্গো ফ্লাইটে ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরাদেহ পৌছায়। সকল প্রসেস শেষে ঢাকা হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আশাদুল হকের হাতে মরাদেহের কফিনটি হস্তান্তর করা হবে। প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে গত ২৮ডিসেম্বর ২০২৩ সালে সৌদি প্রবাসী রিপন হোসেন (২৬) আত্মহত্যা করে।

জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামের সৌদি প্রবাসী যুবক রিপন হোসেন কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশাদুল হকের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ৫ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান রিপন। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল কাসিম ব্রূদা শহরের একটি কৃষি খামারে কাজ করতেন তিনি। রিপন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার জিন্নানগর গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মোবাইল ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া ও বাগবিতণ্ডা হয় তার। রিপন (২৮ডিসেম্বর) প্রেমিকা ভিডিও কলে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। রিপনের বন্ধুরা কাজ শেষে ঘরে ফিরে রিপনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় লাশের পাশে থাকা মোবাইল ফোনে তারা একটি মেয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার প্রমাণও পায়। কিন্তু রিপনের লিগ্যাল ডকুমেন্টস না থাকায় সৌদির সরকারি দাফতরিক কাজে মরাদেহ প্রেরণের জটিলতা দেখে দেয়।

সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও সৌদি প্রবাসী আরটিভি প্রতিনিধি বশিরউদ্দীনের মাধ্যমে জানা যায়, প্রবাসী রিপনের মরদেহ দেশে প্রেরণে কোন সরকারি অর্থায়ন নেই। দেশটির ভিসা নীতি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে চুক্তিবিহীন সেচ্ছায় কাজ করে বেড়াতেন তিনি। এই কারণে তার মৃত্যুতে কফিল কোন প্রকার খরচ বহনে বাধ্য নন। তার লিগ্যাল ডকুমেন্টস না থাকায় তার কোন ইন্সুইরেন্স কোম্পানি বহন করবে নাহ বলে জানান তার কোম্পানি। নিজেদের অর্থায়নে মরাদেহ নিজ দেশ ফেরত নিয়ে আসতে হবে। এমতাবস্থায় ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদের প্রথম সচিব শ্রম (স্থানীয়) স্বাক্ষরিত {স্বারক নং- ১৯.০১.৯৬৬১.৭০০.৩৩.০০১.১৭ (অংশ-০১)-৪৬২} এক চিঠিতে স্থানীয় ভাবে দাফনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জারি করা হয়।

মৃতদেহর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা নাহ হলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যে কোন সময় দাফন করলে দূতাবাসের কোন করনীয় থাকবে নাহ। পরবর্তীতে উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের কৃতি সন্তান সৌদি প্রবাসী রায়হানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে,সৌদি প্রবাসী আরটিভি প্রতিনিধি বশির উদ্দীন এবং ইন্ডিয়ান ভিত্তিক প্রবাসী কল্যান সংস্থার সহযোগিতায় প্রায় ১১হাজার রিয়াল অর্থাৎ সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে তার মরদেহ পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্হা করা হয়। তবে না রিপনের পরিবার, না কোন জনপ্রতিনিধি, না কোন জেলা জনশক্তি অফিস এতে ন্যূনতম সহযোগিতা করেনি বলেও জানান তারা।

অবশেষে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন মাস ৭দিন পর দেশে ফিরেছে সীমান্তবর্তী উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের সৌদি প্রবাসী যুবক রিপন হোসেনের মরাদেহ। শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের একটি কার্গো ফ্লাইটে ঢাকা শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরাদেহ পৌছায়।এদিকে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রেমিট্যান্স যোদ্ধা রিপনের মরাদেহ উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামে জানাজা শেষে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আমিন।

 
Electronic Paper