গাছবন্ধু ব্যাকটেরিয়া
আব্দুর রব, হাবিপ্রবি
🕐 ১০:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিশেষ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো কীটনাশক খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের পরিমাণ হ্রাস করতে পারে ৭০%-৮০%।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক গবেষণায় এই ব্যাকটেরিয়ার জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। দুই বছরের গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি ল্যাবরেটরিতে ৮০টি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৬টি ব্যাকটেরিয়ার জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে যেগুলো সরাসরি কীটনাশক খেয়ে জীবন ধারণ করে। কীটনাশকের পরিবর্তে এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করলে ফসলও যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি জমির উর্বরতাও ধরে রাখা যাবে দীর্ঘ সময় ধরে। এগুলোকে বলা যেতে পারে গাছবন্ধু ব্যাকটেরিয়া।
শুধু তাই নয়, ব্যাকটেরিয়াগুলো টমেটো, ধান ও বেগুন গাছে স্প্রে করলে গাছের দেহে প্রবেশ করে এবং মিথোজীবী সহাবস্থানের মাধ্যমে সরাসরি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন উদ্ভিদ শরীরে সংবন্ধন করতে পারে।
ইতোমধ্যে ৬টি ব্যাকটেরিয়ার জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হকের নেতৃত্বে পিএইচডি ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের একটি দল।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক জানান, কীটনাশক ব্যবহার করার পর তা খাদ্য শৃঙ্খলে থেকেই যায়। যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ। এসব বিষয় থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দুই বছরের নিরলস পরিশ্রমে ছয়টি ব্যাকটেরিয়াকে করা হয় যারা সরাসরি উদ্ভিদে বিদ্যমান কীটনাশক খেয়ে জীবন ধারণ করে। এসব ব্যাকটেরিয়া কীটনাশকের পরিমাণ হ্রাস করতে পারে ৭০%-৮০%।
ব্যাকটেরিয়াগুলো ফসফরাস ও ফসফেট পুষ্টি জোগাতে উদ্ভিদকে সহায়তা করে। ফলে কৃষি জমিতে সার প্রয়োগ কমাতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষক ড. মো. আজিজুল হক। হাবিপ্রবিতে শনাক্ত করা ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো-Enterobacter, Acinetobacter, Serratia, Morganella, Klebsiella, Citrobacter.
গবেষকেরা জানান, এসব ব্যাকটেরিয়া পানিতে মিশিয়ে সরাসরি গাছে স্প্রে করলে ব্যাকটেরিয়াগুলো গাছের পত্ররন্ধ্র দিয়ে প্রবেশ করে এবং উদ্ভিদের সঙ্গে মিথোজীবী হিসেবে সহাবস্থান করে। ব্যাকটেরিয়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও ফসফেট জোগান দেওয়ায় ফসল উৎপাদনে সার কম লাগে ৮০%। ফলে মাত্র ২০% সার প্রয়োগে ফসল ফলানো যাবে।
অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক বলেন, দশে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। যা উন্নত বাংলাদেশ গঠনের একটি অন্যতম অন্তরায়। দেশীয় শাকসবজি যেমন বেগুন, করলা, টমেটো ও ধান গাছের ফলন বৃদ্ধি করতে ও পোকামাকড় নির্মূল করতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক যেমন ডায়াজিনন, ডাইমেক্রন, প্রফেনাফস ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়। এই কীটনাশকের কিছু অংশ রয়েই যায় প্রয়োগকৃত গাছের ফলনের মধ্যে। যার ফলে ক্রমান্বয়ে কনজ্যুমারদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই কীটনাশককে যদি কোনো এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মুক্ত করা যায় বা কীটনাশকের ঘনমাত্রা কমানো যায় তাহলে কনজ্যুমারদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে যাবে। এই ধারণাকে কেন্দ্র করে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ড. মো. আজিজুল হক ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে একটি গবেষণা প্রস্তাবনা পাঠান। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটি নির্বাচিত হয়।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়াম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছিন প্রধান বলেন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে গবেষণার মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যেই ছয়টি ব্যাকটেরিয়ার পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য (Whole genome sequencing) উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। এই বিভাগেরই সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক গবেষণার কাজটিতে প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করছেন। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ((Plant Growth Promoter)। আমরা Pot experimen- এর মাধ্যমে ফলাফল নিশ্চিত করেছি। ব্যাকটেরিয়াগুলোর সিকোয়েন্স ঘঈইও কর্তৃক ভেলিডেটেড (Validated) হয়েছে। এই গবেষণা ফলাফল আমাদের গবেষক দল ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থাপন করেছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।