ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উপবৃত্তি বন্ধ দেড় কোটি শিক্ষার্থীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৪, ২০২০

তিন মাস ধরে প্রাথমিকের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না। হতদরিদ্র শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও শিক্ষাসামগ্রী কিনতে পারছে না। দ্রুত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণের ব্যবস্থা না করলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে। এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে এরই মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে তথা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সাড়ে ২৩ লাখ শিক্ষার্থী। গত ৩১ ডিসেম্বর উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা আদৌ পাবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মোস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দিন মুঠোফোনে খোলা কাগজকে বলেন, অসচ্ছল অভিভাবকদের সন্তানরাই আমাদের স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। উপবৃত্তি বিতরণের ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে। ঝরেপড়া কমেছে। কিন্তু তিন মাস ধরে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ বন্ধ থাকায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেলেও উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় খাতা-কলম কিনতে পারছে না। অভিভাবকরা প্রতিদিন স্কুলে এসে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পায়রাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. মোর্শেদা খাতুন কেয়া গতকাল বিকালে মুঠোফোনে খোলা কাগজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পায়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করলে তারাও কিছু বলতে পারছে না। দ্রুত উপবৃত্তির টাকা বিতরণ না করলে দুর্গম এলাকার এ স্কুলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা কঠিন হবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের শিক্ষা প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুম বিল্লাহ খোলা কাগজকে বলেন, ‘উপবৃত্তি বন্ধ থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাবে। ঝরে পড়া বাড়বে। সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষার এসডিজি বাস্তবায়নের ওপর প্রভাব পড়বে।’
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৮ সালে ফের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) গ্রহণ করে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা এলাকার বাইরের স্কুলের অসচ্ছল পিতা-মাতার সন্তানকে উপবৃত্তি সুবিধা দেওয়া হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, উপবৃত্তি সুবিধাভোগীর লক্ষমাত্রা ছিল ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। এর পরে আরও দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়, পরে এর সঙ্গে আরও ১০ লাখ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল তিন হাজার ৮৫৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে নতুন করে ব্যয় ধরা হয় ছয় হাজার ৯২৩ কোটি ছয় লাখ টাকা।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, একজন শিক্ষার্থী বিশিষ্ট পরিবারকে মাসে ১০০ টাকা, দুই শিক্ষার্থী বিশিষ্ট পরিবারকে ২০০ টাকা, তিন শিক্ষার্থী বিশিষ্ট পরিবারকে ২৫০ টাকা ও চার শিক্ষার্থী বিশিষ্ট পরিবারকে মাসে ৩০০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতি তিন মাস পর পর উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইলে রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত তিন মাসে কোনো শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউসুফ আলী খোলা কাগজকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উপবৃত্তি প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, উপবৃত্তি একশত টাকার পরিবর্তে দেড়শত টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

তারা আরও জানান, বছরের শুরুতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসামগ্রী (খাতা, কলম, স্কুলব্যাগ) কিনতে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। উপবৃত্তির মাসিক দেড়শত টাকা ও শিক্ষাসমাগ্রী বাবদ ৫০০ টাকা দিলে পাঁচ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা দরকার হবে।

 
Electronic Paper