ইসলামে মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়; এটি ইবাদত, শিক্ষা, দাওয়াত ও প্রশান্তিরও কেন্দ্র। তাই প্রয়োজনের সময়ে মানুষ মসজিদে বিশ্রাম নিতে পারবে কি না—এ প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক। কোরআন-হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল বিশ্লেষণ করলে এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
ইতেকাফকারী ও প্রয়োজনীয় অবস্থায় মসজিদে বিশ্রাম
ইতেকাফকারীর জন্য মসজিদে থাকা, বিশ্রাম নেওয়া এবং ঘুমানো ইতেকাফেরই অংশ এবং এতে সওয়াব রয়েছে। এছাড়াও এমন মানুষ যারা ক্লান্ত, পথিক, অসহায় বা যাদের বাইরে বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই, তারাও প্রয়োজনবশত মসজিদে সাময়িক বিশ্রাম নিতে পারেন। এতে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো দোষ নেই। ইমামগণের মতে, প্রয়োজন থাকলে মসজিদে বিশ্রাম নেওয়া বৈধ কাজ।
সাহাবায়ে কেরামের আমলে মসজিদে বিশ্রামের দৃষ্টান্ত
নবীজির (স.) যুগে সাহাবিরা বিভিন্ন সময়ে মসজিদে বিশ্রাম নিয়েছেন বা ঘুমিয়েছেন। আব্বাদ ইবনু তামিম (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুল (স.)-কে মসজিদের মধ্যে চিৎ হয়ে এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে শায়িত অবস্থায় দেখেছি।’ (বুখারি: ৪৭৫)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুল (স.)-এর জীবদ্দশায় মসজিদে ঘুমাতাম। অথচ আমি তখন যুবক ছিলাম।’ (বুখারি: ৪৪০)
তবে কোনো প্রয়োজন না থাকলে এবং মসজিদের বাইরে সহজে বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকলে শুধুমাত্র ঘুমানো বা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করা উচিত নয়। কারণ মসজিদের মূল উদ্দেশ্য ইবাদত এবং এর মর্যাদা বজায় রাখা জরুরি।
মসজিদের মর্যাদা রক্ষার কোরআনি নির্দেশনা
মসজিদের আদব বজায় রাখা মুসলমানের ঈমান ও তাকওয়ার অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করে, এটা তার অন্তরের তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ।’ (সুরা হজ: ৩২)
অন্য আয়াতে মসজিদে আল্লাহর নাম স্মরণকারীদের প্রশংসা করে বলা হয়েছে- ‘একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, ওরা হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮)
এসব আয়াত নির্দেশ করে যে মসজিদকে সম্মান দেওয়া, পরিচ্ছন্ন রাখা ও ইবাদতমুখী পরিবেশ বজায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
প্রয়োজন ছাড়া মসজিদকে বিশ্রামের স্থানে বানানো অনুচিত
মসজিদের মূল উদ্দেশ্য ইবাদত, আল্লাহর স্মরণ ও শিক্ষাদান। তাই কোনো প্রয়োজন না থাকলে মসজিদকে নিয়মিত বিশ্রাম বা ঘুমের স্থান বানানো শরিয়তসম্মত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করে, তা তার অন্তরের তাকওয়া থেকেই।’ (সুরা হজ: ৩২)
এছাড়া সাহাবায়ে কেরামের বিশ্রামের উদাহরণগুলো প্রয়োজন ও সাময়িক অবস্থার ভিত্তিতে ছিল; নিয়মিত অভ্যাস হিসেবে নয়। মসজিদের মর্যাদা বজায় রাখা তাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।
মোটকথা, শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রয়োজনবশত মসজিদে সাময়িক বিশ্রাম বা ঘুমানো বৈধ, এবং নবীজির যুগে সাহাবিরা এটি করেছেন। ইতেকাফকারীর ক্ষেত্রে এটি মহান ইবাদত হিসেবেই গণ্য হয়। দেশের আলেমদের সঙ্গেও মতবিনিময় করলে দেখা যায়, তারাও প্রয়োজনবশত মসজিদে সাময়িক বিশ্রামের অনুমতি দেন, তবে মসজিদের মর্যাদা রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেন।
অতএব, কোনো প্রয়োজন ছাড়াই মসজিদকে নিয়মিত ঘুম বা বিশ্রামের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। মসজিদের মর্যাদা, পরিচ্ছন্নতা ও আদব রক্ষাই সর্বোপরি গুরুত্বপূর্ণ।
কেকে/ আরআই