দীর্ঘদিন ধরে সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ গ্রামের মো. তজিম উদ্দিন চপ ও পিয়াজু বিক্রি করে জীবিকা চালান। সাটুরিয়া বাজারের পাশে রাস্তার ধারে ছোট্ট টেবিলে করে ব্যবসা করেন। সাতজনের সংসার চলে এই অল্প আয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রতিদিনের ধুলাবালি আর খোলা আকাশের নিচে খাবার বিক্রি করতে গিয়ে তার কষ্টের যেন শেষ ছিল না।
‘প্রতিদিনই ধুলাবালিতে খাবার নষ্ট হয়ে যেত, ক্রেতারাও কমে যেত। ভ্যান কিনতে চাইলেও ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না,’- বললেন তজিম উদ্দিন।
তার সেই কষ্টে মোড়া জীবনে এসেছে নতুন আলো। হাতে পেয়েছেন একটি চারপাশে গ্লাস করা আচ্ছাদিত ভ্যান। হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘এখন এই ভ্যান ব্যবহার করে শুধু বাজারেই নয়, ওয়াজ মাহফিল, মেলা, হাটবাজারেও খাবার বিক্রি করতে পারব। বিক্রি বাড়লে সংসারে একটু স্বস্তি আসবে।’
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘আচ্ছাদিত রিকশা ভ্যান কর্মসূচির আওতায় সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ, সদর ও ফুকুরহাটি ইউনিয়নের আটজন অসহায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর হাতে বিনামূল্যে তুলে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টেপ।
এদিকে, দীর্ঘ সাত-আট বছর ধরে হরগজ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ঝালমুড়ি, চানাচুর ও ছোলা-বুট বিক্রি করতেন মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। সব সময় স্বপ্ন দেখতেন, যদি একটি আচ্ছাদিত ভ্যান থাকত! কিন্তু আর্থিক সংকট তাকে তা করতে দেয়নি। টেবিলের ওপর খাবার সাজিয়ে ধুলাবালি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন, কিন্তু পুরোপুরি সম্ভব হতো না।
‘আগে খোলা অবস্থায় বিক্রি করতে হতো, খাবার নষ্ট হতো, ক্রেতারাও এই অবস্থা দেখে চলে যেতেন। এখন এই ভ্যানটা পেয়ে আমি নিশ্চিন্তে বিক্রি করতে পারব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে,’-বললেন ফজলুর রহমান।
হরগজ ইউনিয়নের সুজন মিয়া আগে অস্থায়ীভাবে বাজারে চটপটি-ফুচকা বিক্রি করতেন। নতুন আচ্ছাদিত ভ্যান হাতে পেয়ে এখন তিনি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগে স্কুলের সামনে ছোট টেবিল পেতে এগুলো বিক্রি করতাম। বৃষ্টি হলে দোকান গুটিয়ে বাড়ি যেতে হতো। এখন এই ভ্যান পেয়ে আমি নিশ্চিন্ত। দিন-রাত যে কোনো জায়গায় দোকান বসাতে পারব। আয়ও আগের চেয়ে দ্বিগুণ হবে।’
বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান স্টেপ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনেকেই আর্থিক সমস্যার কারণে মানসম্মতভাবে খাবার বিক্রি করতে পারেন না। তাই আমরা চেষ্টা করছি তাদের এমন সহায়তা দিতে, যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। এখন তারা শুধু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার বিক্রি করবেন না, বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করতে পারবেন।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এই ধরনের আচ্ছাদিত ভ্যান বিতরণ শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তারও অংশ। আগে যারা ধুলাবালির মধ্যে খাবার বিক্রি করতেন, এখন তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ব্যবসা করতে পারছেন। এতে আয় বাড়বে, পরিবারে স্থিতিশীলতা আসবে, যা সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের পরিপূরক হিসেবে এগিয়ে আসুক। তাহলেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে।’
কেকে/এআর