মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল চালু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে। প্রয়োজন পড়লে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
খবর নিয়ে জানা যায়, গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন নদীতে গত বছর নয়ন–পিয়াস বাহিনীর লোকজন একটি বালুমহাল পরিচালনা করতো। তবে সম্প্রতি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে ওই অংশে বালু উত্তোলন আপাতত বন্ধ রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র জানায়, রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত থেকে মেঘনা নদীর কালীপুরা–মল্লিকের চর গ্রামের মাঝামাঝি অংশে রাতের আঁধারে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে একটি চক্র। নদীর এই অংশে কোনো বৈধ বালুমহাল নেই। তবে কারা এর সঙ্গে জড়িত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সরেজমিনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে নদীর কালীপুরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো বাল্কহেড বা ড্রেজার নেই। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা মূলত রাতের বেলায় এলাকায় আসে। দিনের বেলায় ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো আশপাশে ভেড়ানো থাকে। রাত নামলে এগুলো নির্ধারিত স্থানে এনে বালু উত্তোলন করা হয় এবং ভোরের আগে সরিয়ে নেওয়া হয়। দিনের বেলায় বোঝার উপায় থাকে না এখানে কোনো বালুমহাল ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মল্লিকের চর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, শুনেছি মল্লিকের চর গ্রামের জসিম মেম্বার গত কয়েকদিন ধরে একটি অবৈধ বালুমহাল চালু করার ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছিল। রোববার দেখলাম রাতের আঁধারে অবৈধ একটি মহাল চালু হয়েছে। জসিম মেম্বারের সাথে আর কে কে আছে তা বলতে পারবো না। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মাত্র একদিন হয়েছে বালুমহালটি চালু হয়েছে। আরও কয়েকদিন গেলে বুঝতে পারবো কারা এর সাথে জড়িত।
ট্রলারচালক নজরুল বলেন, গতকাল রাতে কয়েকটি ড্রেজার ও বাল্কহেড দেখলাম। কারা এখানে বালু কাটতেছে তা বলতে পারবো না। যদি অবৈধভাবে বালু কাটা হয় তাহলে প্রশাসনের প্রতি আবেদন আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম আহমেদ বলেন, নদীর এই অংশে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতো নৌ ডাকাত সর্দার বাবলা। গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিপক্ষের গুলিতে ডাকাত সর্দার বাবলা মারা যাওয়ার পর থেকে নদীর এই অংশ থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করার সাহস পাইনি।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, এরকম কোন খবর আমার কাছে নেই। তবে আপনারা যেহেতু বিষয়টি জানিয়েছেন আমি নৌ পুলিশকে এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিব।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে এরকম একটি খবর আমিও পেয়েছি তবে কারা এর সাথে জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সকালে আমরা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে একটি বাল্কহেড ও একটি ড্রেজার আটক করেছি। যদি কেউ রাতের আঁধারে অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার চিন্তা করে থাকে তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজন পড়লে প্রতি রাতে আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
প্রসঙ্গত, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা ও নৌযানে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে একাধিক নৌ ডাকাত গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গত এক বছরে ডাকাত সর্দার বাবলা, শুটার মান্নান, হৃদয় বাঘসহ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। অবৈধ এসব বালুমহাল থেকে কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন হলেও সরকার সেখানে কোনো রাজস্ব পায় না।
কেকে/ আরআই