গাইবান্ধায় এসপি-ওসির বিরুদ্ধে এসআইয়ের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় এসআই মনিরুজ্জামানকে জয়পুরহাটের কালাই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
স্বামীর মুঠোফোন ও ল্যাপটপ আটকে রাখা এবং তার স্বামীকে হয়রানি করায় গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত অ্যাঞ্জেলা ও গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এসআইয়ের স্ত্রী কাজলী খাতুন আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এরপর এসআই মনিরুজ্জামানকে জয়পুরহাটের কালাই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার প্রত্যাহারের বিষয় নিশ্চিত করেছেন কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেন।
থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া এসআই মনিরুজ্জামানের দাবি, তার স্ত্রী আদালতে এসপি-ওসিসহ তিনজনের নামে আদালতে মামলা করার কারণে তাকে কালাই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে তিনি পুলিশ লাইনসে যোগদান করেছেন।
স্ত্রীর করা মামলায় তাকে অযাচিত হয়রানি করা হচ্ছে বলেও মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন।
জয়পুরহাট জেলার এসপি মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘অন্য কোনো কারণে নয়, প্রশাসনিক কারণে এসআই মনিরুজ্জামানকে কালাই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। হয়রানির প্রশ্নই আসে না।’
কালাই থানার এসআইয়ের স্ত্রীর দায়ের করা মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, তার স্বামী গাইবান্ধা সদর থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় আসামির নিকট আত্মীয় তারেকুজ্জামান পারিবারিক শত্রুতার জেরে তার স্বামীর বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করেন। এরপর তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। এসব কারণে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার গত ২৫ মার্চ তার স্বামী মনিরুজ্জামানকে তার কার্যালয়ে ডাকেন। তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করা মাত্র তার কাছ থেকে ব্যবহার করা মোবাইল ফোন, ব্যাগে থাকা ল্যাপটপ ও ১৩ হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। পরে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ যাচাই-বাছাই শেষে সদর থানার ওসির কাছে রাখা হয়। এ বিষয়টি বাইরে প্রকাশ করলে চাকরির ক্ষতি হবে বলেও ভয় দেখানো হয় তার স্বামীকে। একপর্যায়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়। পরে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিষয়টি তিনি তার পরিবারকে জানান।
এরপর বদলিজনিত কারণে তিনি রাজশাহী রেঞ্জের জয়পুরহাটের কালাই থানায় যোগদান করেন। সেই থেকে তিনি কালাই থানায় কর্মরত আছেন। এরইমধ্যে গত বুধবার (২২ অক্টোবর) মনিরুজ্জামানের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ল্যাপটপ আটকে রাখার অভিযোগে তার স্ত্রী কাজলী খাতুন বাদী হয়ে গাইবান্ধা আমলি আদালতে গাইবান্ধার এসপি নিশাত অ্যাঞ্জেলা, গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম তালুকদার ও নিকট আত্মীয় তারেকুজ্জামান তুহিনকে আসামী করে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার বলেন,‘মনিরুজ্জামানের এক আত্মীয় ফেসবুকে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালান। বিষয়টি শোনার পর পুলিশ সুপার তাঁকে নিজের কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তখন এসআই মনিরুজ্জামান এসব বিষয় অস্বীকার করেন। পরে তাঁর মুঠোফোন ও ল্যাপটপ পরীক্ষার জন্য সিআইডি পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। সিআইডির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নিশাত অ্যাঞ্জেলা বলেন, ‘তৎকালীন এসআই মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন তার বোনের সাবেক স্বামী ও স্বামীর মামাত ভাই তারেকুজ্জামান তুহিন। মূলত পাথর ও রিয়েল স্টেট ব্যবসায় ও পারিবারিক জমিজমা সক্রান্তের জেরের ঘটনায় তুহিনকে ফ্যাসিস্ট বানানোর চেষ্টা করেন এসআই মনিরুজ্জামান। এ বিষয়ে লালমনিহাটেও মামলা আছে। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে অফিসে ডাকা হলে তিনি সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি। তখন তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটব জব্দ করে ফরেনসিক টেস্টের জন্য সিআইডি হেড কোয়াটারে পাঠানো হয়। রিপোট হাতে পাওয়ার আগেই তার স্ত্রী আমাকে ও ওসিসহ তিনজনের নামে মামলা করে। বিষয়টি এখন আদালতের।’
কেকে/ এমএ